ফাইল ছবি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের তথ্য সংগ্রহ করছে। পুলিশের ঢাকার বিশেষ শাখা (এসবি) সদর দপ্তরের বরাত দিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি–ডিএসবি) গত ২৫ সেপ্টেম্বর বেতার বার্তায় জেলার সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের জেলার কমপক্ষে আট জন, প্রতি উপজেলার পাঁচ জন এবং রাঙ্গামাটি জেলার সব পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে কমপক্ষে পাঁচ ব্যক্তি, যারা বর্তমান সরকারবিরোধী চলমান গণআন্দোলনে ‘জনবল সংগঠক’ বা অর্থায়ন করে কিংবা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করে; তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রথমে ইমেইলে এবং পরে হার্ডকপি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে। এরই মধ্যে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।’
আজ শুক্রবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও বিএনপি আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে যে, ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের সব জেলার পুলিশ সুপার নিজ নিজ এলাকার সব থানার ওসিদের বার্তা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। যা অত্যন্ত ভয়ংকর, অপ্রত্যাশিত, অসাংবিধানিক, এখতিয়ার বহির্ভূত, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আচরণবিধি পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক দল তথা গণমানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও আন্দোলন সমাবেশ করার মৌলিক অধিকার বিরোধী। এটি প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থগুলো বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্দেশে একটি নীল নকশার অধীনে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে গুড়িয়ে দমন করার জন্য একযোগে কাজ করছে। অথচ বর্তমান গণআন্দোলন চলছে মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে এবং এর মধ্যে গত জুলাই থেকে আমাদের দলের পাঁচ জন নেতা নিহত হয়েছেন; ভোলায় দুজন, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও খুলনায় একজন করে তিন জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দিনে দিনে আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘পুলিশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের যে তথ্য সংগ্রহ করছে তা আমাদের সংবিধান কিংবা দেশের অন্য কোনো প্রচলিত আইন বা বিধি-বিধানের আওতায় তারা করতে পারে না। পুলিশ সুপার তার আওতাধীন ওসিদের কাছে তথ্য চেয়েছে তা যে কোনো মানদণ্ডে বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী ও অননুমোদিত পদক্ষেপ। এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, বর্তমান সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ডও ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গণআন্দোলন দমনের হীন উদ্দেশ্যে মানুষ হত্যার জন্য শান্তিপূর্ণ আইনসিদ্ধ গণতান্ত্রিক মিছিলে বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণ করে নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে। আমাদের দেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ৩২, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪৪ এবং প্রচলিত ও আন্তর্জাতিক আইনেও দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে রাজনীতি করা এবং মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা স্বীকৃত রয়েছে। অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের বেতার বার্তা বা অন্যভাবে তথ্য সংগ্রহ আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর, বেআইনি এবং অসাংবিধানিক।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ বা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল করা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার যা দেশের সংবিধান সমর্থিত। নিজ নিজ মতাদর্শের রাজনৈতিক দলকে সমর্থন, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন প্রকারে দলের পক্ষে কাজ করা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকের এই মৌলিক অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া কিংবা অন্য কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে যারা অংশগ্রহণ করে বা অন্যান্যভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে তারা আইনানুগভাবেই তা করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নাম ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এমনকি এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য কী? পুলিশ একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী, কোনো দলীয় বাহিনী নয়। সরকারিভাবে এসব তথ্য পুলিশের সংগ্রহ করার কথা না। এসব তথ্য নিয়ে পরবর্তীতে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে হামলা-মামলা দায়ের কিংবা অন্য কোনোভাবে হয়রানি করাই এদের উদ্দেশ্য বলে আমরা মনে করি। যেসব অতিউৎসাহী দলবাজ কর্মকর্তা এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে সরকারি পদবির অপব্যবহার করে অত্যন্ত হীন ও নগ্নভাবে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত দেশের সচেতন নাগরিকরা তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করে রাখবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে দাতা থাকে। আমেরিকায় ফান্ড রেইজিং পার্টি হয়। এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অংশ যে, রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের কর্মী-সমর্থকদের অনুদান নিয়ে চলতে হয়। এটাই স্বাভাবিক প্রচলিত নিয়ম। আর দল করা, সমর্থক করা বা অনুদান দেওয়াও সাংবিধানিক অধিকার। এভাবে নাম সংগ্রহ করা তাদের (পুলিশ) এখতিয়ার বহির্ভূত। এটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ও অসাংবিধানিক।’
বিএনপি আদালতে যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সেভাবে সিদ্ধান্ত নেইনি। আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গোটা জাতি ও পুলিশ বাহিনীকে জানালাম। যেন তারা বিরত থাকে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো নির্বাচন করতেই চাই, কিন্তু সেই নির্বাচনটা তো হতে হবে নির্বাচনের মতো। ভোটের আগের রাতে নির্বাচন হয়ে গেল, প্রার্থীরা কেউ ক্যাম্পেইন করতে নামতে পারবে না, তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হবে, দেশে ভয়-ভীতি ত্রাসের সৃষ্টি করা হবে—এটা তো হতে পারে না! সুতরাং আমাদের ভয় পাওয়ার প্রশ্নই নেই। তারা ভীত হয়ে আছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। যে কারণে আজকের কলা-কৌশল। জনগণকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে দিয়েছে ভোট দেওয়া থেকে। মানুষই তো ভোট দিতে যায় না। জনগণ ভোট দেবে, তারাই তো যেতে পারে না ভোট দিতে।