আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার দুঃস্বপ্ন দেখছে

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের কথা বলছেন, ইভিএমের কথা বলছেন, যাওয়া-না যাওয়ার কথা বলছেন। এসব বলতে বলতে নির্বাচনের দিন পার হয়ে যাবে। তবে ওই গান এবার হবে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার দুঃস্বপ্ন দেখছে।

 

আজ শনিবার বিকালে মীরপুরের কালসীতে মহানগর উত্তর বিএনপির পল্লবী জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভোলায় নুর আলম, আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধান, মুন্সীগঞ্জে শহীদুল ইসলাম শাওন এবং যশোরে আব্দুল আলিম হত্যাসহ সারাদেশে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর পল্লবী জোনের এই সমাবেশটি সরকারী দল ও পুলিশি বাঁধায় পণ্ড হয়েছিল। এবারও বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগ ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে এই এলাকায় পৃথক পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সারাদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল মহড়া দিতে থাকেন। তবে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল।

 

বিগত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, বিগত দিনে আমাদেরও দোষ আছে, আমরাও সুযোগ দিয়েছিলাম তাদেরকে এরকম একটা নির্বাচনের জন্য। আমাদের নেতা-কর্মীরা কষ্ট পেয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, কারাগারে গেছেন। দুর্বৃত্তায়নের আরেকটা নির্বাচনের সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছিলাম। এবার যারা সেই স্বপ্ন দেখছেন তারা বৃথা স্বপ্ন দেখছেন। এই স্বপ্ন আর পূরণ হবার নয়।

 

ইভিএমের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। আজকে দুই বেলা খেতে পারছে না। অথচ আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইভিএম কেনার মতো লুটপাটের প্রকল্প হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশে বলছেন, চেরাগের জন্য তৈরি হোন। কিন্তু বাংলাদেশ চেরাগের জন্য তৈরি হবে না, তার আগে আপনাকে বিদায় নিতে হবে।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মানুষ রাস্তায় নেমে গেছে। এই লক্ষ জনতার সামনে যারা দাঁড়াবে তারা ভেসে যাবে, জনগণের জোয়ারে তারা ভেসে যাবে। শেষ কথা- রাস্তায় নেমেছি, বাড়ি ফিরে যাবো না।

 

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নিবর, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসীন আলী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

সমাবেশে কোন্দলের প্রভাব, হাইকমান্ডের কড়া হুশিয়ারি

 

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির ঘোষিত ১৬টি সমাবেশের মধ্যে ১৫টি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সোমবার যাত্রাবাড়ীতে ঘোষিত শেষ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মহানগর উত্তরে প্রায় প্রত্যেক সমাবেশে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর বাইরে ‘আমিনুল হক ঠেকাও’ (মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব) পরিকল্পনা থেকে দলের ভিতর থেকেও নানান প্রতিবন্ধকতা এসেছে। মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিকে ব্যর্থ করতেই দলের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে।

 

আজও পল্লবীর সমাবেশ ঘিরে মহানগর উত্তর যুবদলের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। মহানগর যুবদলের এই ইউনিট কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা সমাবেশে যোগদানের জন্য নেতাকর্মীদের যেমন নির্দেশনা দেননি তেমনি যারা সমাবেশে এসেছিলেন তাদের মধ্যেও উশৃঙ্খলতার প্রভাব ছিল। শেষ পর্যন্ত সমাবেশের প্রধান অতিথি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বহিষ্কারের মতো কড়া হুঁশিয়ারিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে, এই এলাকার বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা বুলবুল তার সমর্থিতদের সমাবেশে আসতে মানা করেন বলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অনেকে জানান। যদিও শেষ পর্যন্ত সর্বশেষ সমাবেশটিও সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম হন মহানগর বিএনপির নেতারা।