যশোরে জনতা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির শিকার শতাধিক কৃষক

Jessore map

যশোরে জনতা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির শিকার হয়েছে অন্তত: শতাধিক কৃষক। ঋণের টাকা পরিশোধ করার পরও তাদেরকে ঋণগ্রস্ত দেখানো হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) ঋণ মেলায় এসে ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য চিঠি দিয়েছে। ফলে ওই সব কৃষক এখন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চাঁচড়া শাখা থেকে সদর উপজেলার করিচিয়া গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন ২০১১ সালে ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে তাকে জানানো হয় তিনি ৮০ হাজার টাকা ঋণ খেলাপি। ওই বছর ইব্রাহিম ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং সব ঋণ মওকুপ করার জন্য শাখা ব্যবস্থাপককে অনুরোধ করেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বাকী ১০ হাজার টাকা পরিশোধ না দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা ঋণী দেখায়। এরপর গত বছর (২০২১) সালে তাকে আবারও ১৭ হাজার ৩৯৪ টাকা ৬ পয়সা পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। ৬ ডিসেম্বর ইব্রাহিম ওই টাকা পরিশোধ করে বর্তমান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নেন। ওই পত্রে বলা হয় ব্যাংকের চাঁচড়া শাখার ০৬২৭১০২০৫৯২১৩ হিসাবে কোন পাওনা অপরিশোধিত নেই। গত ২০ নভেম্বর ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয় ২০১১ সালে ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ঋণটি খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আপনার নিকট ২৮ হাজার ৮৯০ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ঋণটি পরিশোধ করার জন্য মৌখিত ও লিখিতভাবে জানানো হলেও পরিশোধ করার কোন উদ্যোগ নেননি। আগামী ২৯ নভেম্বর (আজ) বাগেরহাট বাজারে ঋণ আদায় ক্যাম্পে এসে পাওনা ২৮ হাজার ৮৯০ টাকা পরিশোধের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ঋণ আদায়ের সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ঋণের টাকা আদায় করা হবে।

ইব্রাহিম হোসেন জানান, আমি ঋণের টাকা পরিশোধ করেছি। অথচ আমাকে ঋণগ্রস্ত দেখিয়ে টাকা আদায়ের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। আমি ঋণগ্রস্ত এ পত্র ডাক যোগে আমার নামে না দিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া হয়েছে। ওই চিটি স্থানীয় মেম্বার চৌকাদার দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়েছে। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের অফিসার রমিজ সাহেব বিভিন্ন সময় এসে আমার কাছ থেকে ৫০০ তেকে এক হাজার টাকা নিয়ে গেছে। তার কোন ডকুমেন্ট নেই। এভাবে তিনি প্রায় ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কৃষকদেরকে শেষ করে দিচ্ছে ব্যাংক।

তিনি বলেন, আমি সব টাকা পরিশোধ করেছি, আমার কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। তারপরও আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যে সব কৃষক ঋণ পরিশোধের ডকুমেন্ট নেয়নি, তাদের কি হবে?

শুধু ইব্রাহিমই নয়, জানা গেছে, রুদ্রপুর গ্রামের আফতাব, মাহতাব, হাফিজুর রহমান, করিচিয়া গ্রামের সিদ্দিক, আব্দুর রউফসহ অন্তত: শতাধিক কৃষককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যারা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করার পরও আজ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এসব কৃষক বর্তমানে মামলার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত দিন কাটাচ্ছে।

রফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, তার বাবা রবিউল ইসলাম জনতা ব্যাংক চাঁচড়া শাখা থেকে একটি ঋণ গ্রহণ করেন। তিনি জীবিত থাকা অবস্থা ওই ঋণ পরিশোধ করেন। তিনি তাকে ঋণ খেলাপি দেখিয়ে আমার কাছে চিঠি দিয়েছে। আমাকে ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য বলেছে।

তিনি বলেন, বাবা জীবিত থাকা সময় যে সব কাগজপত্র ছিলো তা এখন আমাদের কাছে নেই। আমার মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংক চাঁচড়া শাখা আজ সদর উপজেলার বাগেরহাট বাজারে ঋণ আদায়ের ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। এতে অন্তত দুই শতাধিক কৃষককে ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য বলা হয়েছে। এরমধ্যে অন্তত: শতাধিক কৃষক তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু তারপরও তাদেরকে ঋণ খেলাপি দেখিয়ে ঋণ পরিশোধ করা জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা নতুন করে আবার কৃষকদের ঋণ দেব। এজন্য ঋণ মেলার আয়োজন করেছি। এখান থেকে বেঁচে বেঁচে আবার ঋণ দেওয়া হবে। আমরা আপনারা এসই তো একই। এ নিয়ে লেখালেখির দরকার নেই।