মঙ্গলবার মাঠেই আসেননি বিরাট কোহলি। ঐচ্ছিক অনুশীলনে হোটেলেই সময় কাটিয়েছেন। ম্যাচের আগের দিন আজ মাঠে এসে কাঁধে ক্রিকেট ব্যাগ নিয়ে সোজা চলে যান একাডেমি মাঠে। সেখানে ঘণ্টাখানেক চললো তার ব্যাটিং অনুশীলন।
সে কী অনুশীলন! মনে হচ্ছিল মূল ম্যাচেই ব্যাটিং করছেন। সুন্দর কভার ড্রাইভ, দৃষ্টিনন্দন অন ড্রাইভ, পুল, কাট করে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন। ঘাম ঝরিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে উইকেটে ঢুঁ মারেন। দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ উইকেট বোঝার পর টিপে দেখেন। রহস্যময় মিরপুরের উইকেট দেখে খুব খুশি হওয়ার কথা নয়। এই উইকেট নিয়ে তো ধাঁধায় থাকতে হয় স্বাগতিকদেরও!
চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে রান পাননি কোহলি। তাইজুলের ম্যাজিকাল ডেলিভারিতে থেমে যান ১ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ রান তুলে ছিলেন অপরাজিত। ঢাকায় নিশ্চয়ই বড় কিছু করতে মুখিয়ে ভারতের সাবেক অধিনায়ক। একই সঙ্গে টেস্টের ৩২ ইনিংসে সেঞ্চুরি খরা কাটাতে চাইবেন। এবার কি তাকে থামাতে পারবে বাংলাদেশ? কাজটা করতেই হবে। নয়তো সর্বনাশ। কোহলি রান পেলে ভারতের স্কোরবোর্ড ছুটবে।
তবে একটি পরিসংখ্যান বাংলাদেশকে বড় আশা দেখাতে পারে। বাংলাদেশে দুইবার টেস্ট খেলতে এসে রান পাননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ২০১৫ সালে ফতুল্লাতে একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১৪ রানে থেমেছিলেন। তাকে আউট করেছিলেন জুবায়ের হোসেন লিখন।
এবার চট্টগ্রামে তার ব্যাট থেকে আসে ১ ও ১৯*। তবে ভাবনার বিষয় আরেকটি। কোহলি ৩২ ইনিংস আগে যে টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সেটা বাংলাদেশের বিপক্ষেই। ২০১৯ সালে ইডেন গার্ডেনে ১৩৬ রান করেছিলেন। এছাড়া ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে করেছিলেন ২০৪ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার গড় ৬৮.৬৬।
প্রথম টেস্টে কোহলি একবার সুযোগ দিয়েছিলেন। তাকে ফেরানোর সুযোগটি লুফে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টেও সেই সুযোগ হাতছাড়া না করার প্রত্যয় স্বাগতিকদের। তার উইকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারার মতোই মহামূল্যবান বলেছেন অ্যালান ডোনাল্ড। খেলোয়াড়ি জীবনে ডোনাল্ড শচীন ও লারার বিপক্ষে সফল বোলার ছিলেন। তাদের উইকেট পাওয়া ছিল আনন্দের। সেই আনন্দ এখন কোহলির উইকেটে পাওয়া যায় বলেই অভিমত ডোনাল্ডের।
‘তাদের উইকেটগুলো মহামূল্যবান। এটা ঠিক তেমন, টেন্ডুলকার যখন ক্রিজে আসে আপনি জানেন যে এই উইকেটের মূল্য আকাশ ছোঁয়ার সমান। বিরাট যখন মাঠে আসে এবং আপনি যদি তার বিরুদ্ধে কোনও সুযোগ নষ্ট করেন, তাহলে ভুগবেন। কারণ ওই সুযোগের পর তারা আর কোনও সুযোগ আপনাকে দেবে না। মনে হতে হবে আপনি লারার বিরুদ্ধে বোলিং করছেন। হঠাৎ সেই উত্তেজনা বেড়ে গেলো। আমি নিশ্চিত বিরাট এই টেস্টে একটি সেঞ্চুরি করে বাড়ি ফিরতে চাইবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আমরা ভালো করেছি। আশা করছি সামনেও ভালো কিছু করবো।’- বলেছেন ডোনাল্ড।
ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে আছেন কোহলি। চট্টগ্রামে শেষ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। অবশ্য ঢাকায় দুই ওয়ানডেতে হাসেনি তার ব্যাট। উইকেটের কারণেই ভুগেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকায় এবার ফিরে রান করতে মুখিয়ে থাকবেন টেস্টে ৮ হাজারেরও বেশি রান করা এ ব্যাটসম্যান। তার বিরদ্ধে অর্ধেক সুযোগও কাজে লাগানোর কথা বলেছেন ডোনাল্ড।
বাংলাদেশের বোলিং কোচ বলেছেনন, ‘আমরা বোলিং আক্রমণ দিয়ে ভালো সুযোগ তৈরি করি। রান রেটও তিনের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু যে সুযোগগুলো তৈরি করি সেগুলো সব সময় লুফে নিতে পারি না। এজন্য চাপ থেকে বেরিয়ে আসে দলগুলো। এজন্য আমাদেরকে ধৈর্যশীল, সহনশীল ও সৃষ্টিশীল হতে হবে। শুধু সেগুলোই নয়, তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া অর্ধেক সুযোগগুলোকেও আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে।’