গণঅবস্থানে বড় শোডাউনের পরিকল্পনা বিএনপির

bnp logo

আগামী বুধবার গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বড় শোডাউনের পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। দশ বিভাগীয় শহরে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে গঠন করা হয়েছে বিভাগভিত্তিক সমন্বয় টিম। এসব টিম সংশ্নিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা, মহানগর ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল ১১টা থেকে ৪ ঘণ্টার এ কর্মসূচিতে বড় জমায়েতে কার্যক্রম শুরু করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। একই সঙ্গে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণের পক্ষে ১০ দফা ঘোষণা করেছি। এসব দাবি আদায়ে যুগপৎভাবে আমরা রাজপথে নেমেছি। ক্ষমতাসীন সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, লুটপাট, নির্যাতনসহ বহুবিধ অন্যায় দেশের মানুষ কখনও ভালোভাবে নেয়নি। এখন তারা জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, গণঅবস্থান কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এই ধাপে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎভাবে আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দল। এরই মধ্যে গত ৩০ ডিসেম্বর ৩৩টি দলকে নিয়ে সারাদেশে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করে। এদিন ৫৪টি দল ও সংগঠন গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপির মতো অন্যান্য দলও সাধ্যমতো নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এদিন জামায়াত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ উপলক্ষে দেশের সব মহানগরী শাখায় আলোচনা সভার আয়োজন করবে দলটি।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, গত জুলাই থেকে রাজপথের কর্মসূচি পালনে দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের। কৈফিয়তের জায়গাতেও এখন অনড় দলের হাইকমান্ড। যেনতেন অজুহাতে কর্মসূচি পালনে অনীহা দেখা গেলে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। এ জন্য হামলা-মামলাসহ সব বাধা অতিক্রম করে ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলটির সিনিয়র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই সোচ্চার।

বিএনপির প্রস্তুতি: বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের ইউনিটের নেতারা এরই মধ্যে গণসংযোগ, কর্মিসভা, লিফলেট বিতরণসহ প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে। ঢাকা বিভাগীয় গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে প্রতিদিনই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অনুষ্ঠিত দফায় দফায় বৈঠকে নেতাকর্মীকে দেওয়া হচ্ছে নানা দিকনির্দেশনা। নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন কৌশল। ১০ দফা দাবিকে তুলে ধরতে তৈরি করা হচ্ছে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন। এ ছাড়া প্রত্যেক বিভাগে এ কর্মসূচি পালনে কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিনিয়র নেতাদের।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক জানান, দলের যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে তাঁরা সবসময়ের প্রস্তুতি নিয়ে আছেন। গণঅবস্থান কর্মসূচিকে সমাবেশে রূপ দেওয়ার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

 

সিলেট বিভাগের দলনেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিগত দিনগুলোতে বিএনপি যেসব দাবি জানিয়ে আসছে, কথা বলেছে তা এখন জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশের পরিবর্তনটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, এটা এখন সবার দাবি।

সমমনা জোট ও দল: যুগপৎ আন্দোলনের শুরুতে গণমিছিলের কর্মসূচিতে সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও এবারের কর্মসূচিকে ঘিরে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন তারা। ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি ছাড়াও সাতদলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং এলডিপি ও জামায়াতে ইসলামী গণমিছিল করে। এবার এর সঙ্গে মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, ৪ দলের জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং ১৫ সংগঠন সমন্বয়ে সমমনা গণতান্ত্রিক জোট রয়েছে।

গণঅবস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ কয়েক দফা প্রস্তুতি বৈঠক করেছে। ওইদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তাঁরা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

পূর্ব পান্থপথ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় আকারে শোডাউন করে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি নেতাকর্মীরা। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে ১২ দলীয় জোট। পুরানা পল্টন মোড়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছেন ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। এর আগে গণমিছিলের কর্মসূচিতে অংশ না নিলেও এবারের কর্মসূচি পালনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণফোরাম। আরামবাগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।