পুরোনো মেশিন ও ব্যালটে ইসির ভোটের প্রস্তুতি

নতুন দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প কবে পাশ হবে-সে সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি পরিকল্পনা কমিশন। এমনকি এ প্রকল্পের পিইসি সভারও তারিখ নির্ধারণ হয়নি। উলটো কমিশনের কর্মকর্তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে জেনেছেন-এ প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের হাতে যে ইভিএম ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আছে, তা দিয়েই আগামী নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি সচিবালয়। ইতোমধ্যে সারা দেশে তিন লাখের কিছু বেশি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহারের উপযোগী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

একই সঙ্গে ২০১৮ সালে কেনা ইভিএমগুলো ব্যবহারের উপযোগী কি না-তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইভিএম ও ব্যালট-দুই প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। তবে আগামী নির্বাচনে কতটি আসনে ইভিএম ও কতটি আসনে কাগজের ব্যালটে ভোট হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। চলতি মাসেই এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনাররা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু যে দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে, এটি পাশের ক্ষেত্রে সেই গতি নেই। এতে অনেকটা হতাশ ও বিব্রত নির্বাচন কমিশন। তারা আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় আলোচনা হবে-এমন আভাস আগে পাওয়া গেলেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ইসির হাতে থাকা সরঞ্জাম দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান ইভিএম দিয়ে আগামী নির্বাচনে ৫০টি আসনে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হবে।

ইভিএম’র পাশাপাশি কাগজের ব্যালটে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে যেসব ইভিএম আছে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী কতটা তা যাচাই করা হচ্ছে। ইসির ১০টি অঞ্চলের মধ্যে ৫ অঞ্চলের কিইউসি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে যেগুলো উপযোগী থাকবে, সেগুলো আগামী নির্বাচনে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত ইভিএম প্রকল্প পাশ, ওই প্রকল্পের আওতায় কেনা মেশিনও নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়ার প্রস্তুতিও পাশাপাশি অব্যাহত রয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, ইভিএম কেনার নতুন প্রকল্প পাশ না হলে ২০০-২৫০ আসনে কাগজের ব্যালটে ভোট হবে-এমন ধারণা থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাকি আসনে মাঠে থাকা ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। কাগজের ব্যালটে ভোটের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে থাকা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে তিন লাখ দুই হাজার ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এ সংখ্যক ব্যালট বাক্স দিয়ে ৩০০ আসনেই ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে। নতুন করে ব্যালট বাক্স কেনার প্রয়োজন হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার। কাগজের ব্যালটে ভোট হলে বুথের সংখ্যা দাঁড়াবে দুই লাখ ২০ হাজার থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার। প্রতিটি কক্ষে একটি করে ও প্রতিটি কেন্দে অতিরিক্ত একটি করে ব্যালট বাক্স দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এ হিসাবে দুই লাখ ৭৫ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের প্রয়োজন হবে। ইসির হাতে ওই সংখ্যার চেয়ে বেশি রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ সংখ্যা ৪০১৮৩টি ও ভোটকক্ষ সংখ্যা দুই লাখ সাত হাজার ৩১২টি ছিল। এবার ভোটার বেড়ে যাওয়ায় ভোটকেন্দ ও বুথের সংখ্যাও বাড়বে।

 

অপর দিকে ইসির হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে যতটা সম্ভব আসনে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা সামনে রেখে এগুচ্ছে ইসি সচিবালয়। দেশের সব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় কাগজের ব্যালট ও ইভিএম ব্যবহার করলে কতটি কেন্দ ও ভোটকক্ষ হবে তার তালিকা পৃথকভাবে তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইসির পাঁচজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে আরও জানা গেছে, তারা ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি হিসাবে প্রতি ৩০০-৪০০ ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ এবং কাগজের ব্যালটে ভোটের ক্ষেত্রে ৫০০-৬০০ জনের জন্য একটি কক্ষ ধরে পৃথক তালিকা তৈরি করছেন। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে থাকা ইভিএম কতগুলো সচল আছে, কতগুলো সামান্য মেরামতে সচল করা সম্ভব এবং কতগুলো পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে সেই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, আগামী নির্বাচনে ইভিএম’র ব্যবহার কমলে কাগজের ব্যালটের সংখ্যা বাড়বে। ওই লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতিও নিচ্ছে ইসি সচিবালয়। নির্বাচনের ব্যালট পেপার, মনোনয়নসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম ছাপানোর বিষয়ে সরকারি ছাপাখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামী মাসে বৈঠকের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।