কোচিং ব্যবসায় ক্ষতি হবে, তাই নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা

কারও কোচিং ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কেউ কেউ ভাবছেন তাদের নোট-গাইডের ব্যবসা চলবে না। এজন্য নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ভেতর থেকেও বিরোধিতা চলছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের বলব যে, পড়াশোনাটা ভালোভাবে করতেই হবে। মুখস্ত না, শিখে শিখে আত্মস্থ করে এবং সেটা যেন প্রয়োগ করা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে, একটা নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে হলে অনেক রকমের কিছু করতে হয়। সেখানে অনেক ঘাটতি থাকতে পারে, অনেক সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু এই শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে, এটি চলবে। কেউ কেউ কোথাও কোথাও মনে করছেন তাদের কোচিং ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কোচিং ব্যবসা চলবে না। কেউ কেউ ভাবছেন তাদের নোট-গাইডের ব্যবসা চলবে না। সেই কারণে অনেকে বিরোধিতা করছেন। আমরা কিন্তু সেটিও লক্ষ্য রাখছি।
দীপু মনি বলেন, নতুন কারিকুলাম থাকবে, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আমাদের শিক্ষার্থীরা ইনশাআল্লাহ জেনে বুঝে শিখে প্রয়োগ করতে শিখে দক্ষ-যোগ্য মানুষ হবে। আমরা অনেক বেশি বিজ্ঞান প্রযুক্তির ওপর যেমন জোর দিচ্ছি, একই সঙ্গে মানবিক সৃজনশীল মানুষ হওয়া জরুরি। সেদিকেও আমরা জোর দিচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন চিন্তা করতে শেখে, যেন সমস্যার সমাধান করতে শিখে।
‘এই যে ভাবতে শেখা, এটাকে একটা প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ভয় পায়। যদি ভাবতে শিখে যায় দেশের মানুষ, তাহলে তো আর তাদের মগজ ধোলাই করা যাবে না। কাজেই তাদের অনেক ভয়। এই কারণে অনেক রকমের বিরোধিতা আছে। কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমাদের এই নতুন শিক্ষাক্রম এগিয়ে যাবে, চলবে।’
মন্ত্রী বলেন, একটা কথা একেবারে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই-  আওয়ামী লীগ তার জন্ম মুহূর্ত থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামবিরোধী বা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো দিন কোনো কিছু করেনি, কোনো দিন করবেও না। কাজেই এই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যেসব মিথ্যাচার, অপপ্রচার হচ্ছে সেগুলো মিথ্যাচার, সেগুলো অপপ্রচার। সেগুলো যারা করছে তারা চূড়ান্ত রকমের ইসলামবিরোধী কাজই করছে। কারণ ইসলাম কখনও মিথ্যাচার, অপপ্রচার, গুজব রটানো- এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। অতএব যারা ইসলামের দোহাই দিয়ে এগুলো করছেন তাদের প্রতিহত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই দেশটা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করে দিয়েছিলেন, আমরা সেই দেশটাকে আজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে। এই দেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। যেখানে থাকবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে স্মার্ট নাগরিক। আর সেই স্মার্ট নাগরিক কিন্তু আপনারাই, আমাদের শিক্ষার্থীরাই।
‘আপনারা স্মার্ট নাগরিক হবেন স্মার্ট শিক্ষার মাধ্যমে। সেই স্মার্ট শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। কাজেই আপনারা সবাই পড়াশোনায় মনোযোগ দেবেন। এর বাইরে যে সহশিক্ষা সহশিক্ষা আছে, সেই কাজে অংশ গ্রহণ করবেন। আমাদের নিজের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সাহিত্য- সব কিছুকে জেনে বুঝে আত্মস্থ করে এর মধ্য থেকে যে অন্তর্নিহিত শক্তি তাকে অনুধাবন করে সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আপনারা একেকজন স্মার্ট নাগরিক হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন, এই বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সেনার বাংলাদেশে পরিণত করবেন।’