পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সমগ্র বিশ্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব দেখে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অডিটোরিয়ামে উগান্ডার কাম্পালায় অনুষ্ঠিত ১৯তম ন্যাম সামিট ও ৩য় সাউথ সামিটে অংশগ্রহণোত্তর মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মুহ. খুরশেদ আলম ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দুই শীর্ষ সম্মেলনে কান্ট্রি স্টেটমেন্ট দেওয়ার পাশাপাশি সাইডলাইনে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব, কমনওয়েলথ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকসহ ২ দিনে ১৭টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রথম দিনেই ১২টি বৈঠক হয়। বহু দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। সবাই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং একসঙ্গে কাজের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এসব দেখে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তারা আরও আবোলতাবোল বলা শুরু করেছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সামিটের সাইডলাইনে যেসব দেশের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, আমরা কয়েকটি বিষয় প্রাধান্য দিয়েছি। এর মধ্যে ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু অন্যতম।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গাজা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেছি এবং তিনি যে রাফাহ সীমান্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ নিরসনের আহ্বান জানিয়েছিলেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের বিষয়েও আলাপ হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি একই সঙ্গে উপ-প্রধানমন্ত্রী, তার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি শুরু করতে বলেছি এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আসার পর থেকে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য অনেকটাই কমেছে। আমরা আবার দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছি। মিয়ানমার থেকে নানাভাবে মাদক আসে এবং সেখানে বিভিন্ন গ্রুপ নিজেরা বিবদমান থাকলেও একত্রে মাদক ব্যবসায় জড়িত সেটি তারা স্বীকার করেছেন এবং এর প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে সম্মত হয়েছেন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতকেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলো নিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘উগান্ডায় কৃষির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটিতে তুলা চাষ করা যায়। পাম অয়েলও চাষ করা যায়। আমরা পরিকল্পনা করছি, শিগগিরই একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল সেখানে পাঠাব। এছাড়া বেলারুশ, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে আগ্রহ দেখিয়েছেন। সিঙ্গাপুর, বাহরাইন, সৌদি আরব, কাতারসহ যেসব দেশে আমরা জনশক্তি রপ্তানি করি সেখানে প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা সমাধানের জন্যও আলাপ হয়েছে। পাশাপাশি ফিলিস্তিন, নেপাল, বেনিন, বতসোয়ানার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে।’
উগান্ডার কাম্পালায় ন্যাম, ৭৭ জাতি গ্রুপ ও চীনের তৃতীয় দক্ষিণ শীর্ষ সম্মেলনে দেশের প্রতিনিধিদল নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ এ মুহিত, কেনিয়া ও উগান্ডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক মুহাম্মদ প্রমুখ।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের সাক্ষাৎ : এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে শেখ।
এ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য অনুদান হিসাবে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের হোস্ট কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার সহজ ঋণ (সফট লোন) দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ৫৬ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে কার্যক্রম বৃদ্ধির কথা বলেছেন।