পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে রণক্ষেত্র কলকাতা শহর। ধাপে ধাপে চলে পুলিশের জলকামান, টিয়ার শেল।
চলে অবিরাম লাঠিচার্জ। জল কামান বন্ধ হতেই ফের জমায়েত শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
ভিড়ের মধ্যে থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট। ইটের আঘাতে পুলিশ সদস্যের মাথা ফাটে। পাল্টা লাঠিচার্জ চলে পুলিশের। আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা শহরে। বন্ধ, স্কুল কলেজসহ বহু অফিস।
মঙ্গলবারের (২৭ আগস্ট) সড়ক ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আর পুলিশের দখলে।
কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এদিন পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন, নবান্ন অভিযানের ডাক দেয়। সমর্থন দেয় সাধারণ রাজ্যবাসী ও বিজেপি।
বামেরা প্রথমে সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে পিছিয়ে আসে। ছাত্রসমাজের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল করে নবান্ন যাবে এবং অপশাসনের জন্য, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করবেন। তাদের একটিই দাবি, এ অন্যায়ের প্রতিবাদ একটিই বিচার, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ।
এ দাবিতে শহরের ১৯ জায়গা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নবান্নের দিকে আসতে থাকেন। তাদের থামাতে পুলিশ শহরের চারদিকে ত্রিস্তরের ব্যারিকেড গড়ে তোলে। প্রথম ধাপে বাঁশের সঙ্গে বাঁধা হয় লোহার গেট।
দ্বিতীয় ধাপে রাখা হয় বড় বড় কন্টেইনার। তৃতীয় ও শেষ ধাপে সড়ক খুড়ে বসানো হয় লোহার রড়। একেবারে খাঁচার মত ঘিরে ফেলা হয় নবান্ন। এসব করা হয় প্রশাসনিক ভবন নবান্ন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে।
কলকাতার ১৯ জায়গায় পুলিশ ব্যারিকেড দেয় মুখ্যমন্ত্রী ও তার প্রশাসনিক ভবনের নিরাপত্তার কারণে। দুপুর ২টা নাগাদ শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-সাধারণেরা নবান্নের উদ্দেশ্য রওনা হলে পথে তাদের বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেয় পুলিশ। জনগণের মুখে তখন ছিল একটিই স্লোগান- উই ওয়ান্ট জাস্টিস এবং দফা এক, দাবি এক মমতার পদত্যাগ।
তাদের হাতে না ছিল লাঠি। না ছিল কোনো অস্ত্র। ভারতের পতাকা নিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেডের সামনে আসতেই সময় নষ্ট না করে ব্যারিকেডের ওপার থেকে পুলিশ জল কামান ব্যবহার শুরু করে। মুহূর্তেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যান আন্দোলনকারীরা।
এরপর আবার তারা এগোতে থাকেন, তখনই চলে টিয়ার শেল। তখনই পুলিশের ওপর উড়ে আসে ইটবৃষ্টি। এরপরই ব্যারিকেড পার করে লাঠিচার্জ করতে উদ্যত হয় পুলিশ। তখনই শুরু হয় ধস্তাধস্তি। পুলিশকে হাতের নাগালে পেয়ে সাধারণেরা চড়াও হতে শুরু করেন। মাথা ফাটে পুলিশের। লাঠির ঘায়ে আহত হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের আরও বাহিনী এসে তাদের বাস ভর্তি করে গ্রেপ্তার করতে থাকে। কয়েক ধাপে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। তাই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের সংহিসতা চলেছে। অপরদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তারা ন্যূনতম সুযোগ দিতে চান না বিক্ষোভকারীদের।
তাদের কাছে তথ্য আছে, অনেকেই পুলিশ সেজে বিক্ষোভের মধ্যে গুলি চালাতে পারে। তাই কোনোভাবেই তাদের এগোতে দেওয়া যাবে না। এর মধ্যেই বাংলাজুড়ে বুধবার ১২ ঘণ্টা হরতাল ডাকা হয়েছে।