ফিনিক্স পাখির মতো জেগেছে বিএনপি

দল ভাঙার সমস্ত আঘাতের বিপরীতে বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে বারবার ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। চক্রান্ত এখনো শেষ হয়নি। এখন বিএনপির কৃতিত্ব নস্যাতের চক্রান্ত চলছে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

রোববার বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের নিচে দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় ১৭ বছর পর ‘মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে’ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে বিএনপি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নতুন বাংলাদেশ গঠনের শপথ নিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর কঠিন মুহূর্তে দেশের হাল ধরেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯ দফার ভিত্তিতে তিনি বিএনপি গঠন করেন। ৪৬ বছরে বিএনপির যে অর্জন তা অনেক বড়। বিএনপি এখন দেশের সর্ববৃহৎ দল। তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১৬ বছর আন্দোলন করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন ছিল মুখ্য লক্ষ্য। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে, গণতন্ত্র পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সেই আন্দোলন চলবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে তা ঠিক করতে সংস্কার চলছে। বিএনপি বিশ্বাস করে সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আধুনিক বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করতে শপথ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপির আজ খুশির দিন, ৪৬ বছর পরেও বিএনপি সুসংগঠিত আছে। শেখ হাসিনা পালিয়েছে, সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটাকে নস্যাৎ করতে দেওয়া যাবে না, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি ১৭ বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন করেছে, অসংখ্য নেতাকর্মী খুন হয়েছে, অনেক ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে। এবারের আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে যেই জনগণ ছিল তাদের একটা অংশ বিএনপির নেতাকর্মীরা। যত অত্যাচার-নির্যাতন হোক বিএনপির রাজনীতি করে যাব। খুব শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে জানান তিনি।

দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান

অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আব্দুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য নিজে কাজ করছেন- সেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবার জন্য আজকে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, শপথ নিয়েছি। যেকোনো বাধাই আসুক, সব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করব। মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাব, এটা আমাদের শপথ।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আজকে এদিনকে স্মরণ করছি। আল­াহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আজকে আমরা এই দিনটিকে মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে পালন করতে পারছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে, আগামী দিনে সঠিক রাজনীতি এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সঠিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এখন বিএনপির মূল কাজ হচ্ছে, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই আদর্শগুলোকে বাস্তবায়িত করা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকে প্রতিষ্ঠিত করা।

জিয়ার সমাধিতে নেতাকর্মীদের ঢল : সকাল থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নামে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাধি প্রাঙ্গণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে।

বিগত প্রায় ১৭ বছর এমন পরিবেশে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেতে পারেনি বিএনপি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্ত পরিবেশেই দলীয় কর্মকাণ্ড পালন করছে দলের নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

তিনি শহিদ নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এরপরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, কৃষক দল, জাসাস, তাঁতীদলসহ বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দুপুর ১২টার দিকে নেতাকর্মীদের ঢল সমাধি প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে বিজয় সরণি পর্যন্ত পৌঁছায়। রঙিন পোশাক, হাতে রঙিন ব্যানার, মাথায় দলীয় পতাকা বেঁধে তারা পুরো এলাকা সরব করে তোলেন।

এদিকে বাদ জোহর রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বন্যায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা, সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা এবং জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানেও হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এদিকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৫ দিনের কর্মসূচি নিয়েছিল বিএনপি। তবে দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহে ভয়াবহ বন্যার কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঘোষিত কর্মসূচি সীমিত করে এর অর্থ দলের ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হয়েছে।