একের পর এক অপচিকিৎসা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ক্লিনিকটি আড়াইশ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থিত। অভিযোগের শেষ নেই এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। এছাড়া অনেক সময় রোগীর পরিবারের সাথে প্রতিষ্ঠানের একটি সমঝোতার কারণে পরিবার স্বাস্থ্য বিভাগে অভিযোগ দেয় না। আর পরিবারের অভিযোগ না দেয়ার অজুহাতে স্বাস্থ্য বিভাগ কোন পদক্ষেপ নেয়না। তবে মৃত্যুর একাধিক ঘটনা ঘটলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেয়াই আঙ্গুল উঠছে স্বাস্থ্য বিভাগের দিকে।
সূত্র জানায়, ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের ফলে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) অনন্যা রহমান বৃষ্টি (২০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। এদিন দুপুর ২ টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত বৃষ্টি যশোর শহরতলী আরবপুরের শ্রাবণ ইসলামের স্ত্রী।
বৃষ্টির চাচা জিয়াউল হক জানান, গত ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে তার ভাতিজা অনন্যা রহমান বৃষ্টিকে দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিকে নেয়া হয়। ওই রাতে চিকিৎসক শান্তা ইসলাম তার শরীরে ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচার করেন। কিছু সময় পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। সংকটাপন্ন অবস্থায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে খুলনা গাজী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার শরীরের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জানান, অস্ত্রোপচারকালে তার প্রসাবের নাড়ীতে রক্ত জমে যায়। জমাট বাধা রক্তের কারণে তার প্রসাব বন্ধ হয়ে দুই কিডনি বিকল হয়ে যায়। এরপর ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কিন্তু সেখানে আইসিইউ ইউনিটে জায়গা না হওয়ায় তাকে ধানমন্ডির ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। রোববার বেলা ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
মুঠোফোনে ক্লিনিকের মালিক রাজু আহম্মেদ জানায়, আমি যশোরের বাইরে আছি বিষয়টি আমার জানা নাই। আর রোগী মরলে আমি মালিক হয়ে কি করতে পারি? এটা ডাক্তার করেছে সে বিষয়টি ভালো বলতে পারবে। পরবর্তীতে ডাক্তারের নাম্বার চাইলে তিনি বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে।
সবশেষে তিনি বলেন, ডাক্তারের নাম্বার আমার কাছে নাই ম্যানেজারের কাছ থেকে নেন। তখন ম্যানেজারের নাম্বার চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম্বার যেভাবে ম্যানেজ করেছেন ম্যানেজারের নাম্বারটা ওইভাবে ম্যানেজ করে নেন।
এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান জানাই, পরিবার থেকে এখনো কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে সোমবার বিকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
বার বার ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কেন পদক্ষেপ নেয়া হয় না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। খুব দ্রুত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ২০ মে সিজার করানোর ফলে মনিরামপুর উপজেলার কোয়াদা বাজার এলাকার তাজনিন সুলতানা রুকু (২৪) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। এঘটনায় নিহতের স্বামী নুরুজ্জামান বাদি হয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নামে মামলার জন্য কোতয়ালি থানায় ও সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন।
এছাড়া শাহীন রেজা নামে নাক-কান-গলার এক চিকিৎসক দিয়ে প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করার ফলে গত ৭ জুলাই বিকেলে রোগীর স্বজনরা ওই ক্লিনিকে হামলা চালান। ওই চিকিৎসক অপারেশনের সময় খাদ্য ও প্রস্রাবের নাড়ি একত্রে সেলাই করায় মৃত্যুশয্যায় থাকায় স্বজনরা হামলা চালান। ওই রোগী বাঘারপাড়া উপজেলার চানপুর গ্রামের মঈনুল ইসলামের স্ত্রী ডলি।
সবশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর একজন প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। মণিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের আব্দুল আলিম চারজনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন।
আসামিরা হলেন, শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের দেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক রাজু আহমেদ, ডা. সন্দীপ কুমার পাল ওরফে এস কে পাল (সার্জন), ডা. মনিরুল ইসলাম (অজ্ঞান) ও স্টাফ নার্স রানু।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম কিবরিয়া অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন।