নীতিমালা প্রণয়নে মেধাবীদের ভূমিকা রাখতে সংসদে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব: খসরু

দেশের মেধাবী মানুষ যাতে নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারে তাই বিএনপি সংসদে উচ্চ কক্ষের প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, এজন্য পার্লামেন্টে আমরা উচ্চ কক্ষের কথা বলেছি।

যাতে করে মেধাবীরা এসব যায়গায় ভূমিকা রাখতে পারে। মেধাবীরা রাজনীতিতে যে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে পারবে সেটা সাধারণ রাজনৈতিকরা পারবে না।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) কর্তৃক বাংলাদেশ ২.০ সংস্কার প্রস্তাব শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ বা নিজ সুবিধার জন্য পরিবারের সদস্যদের পাঠাতে না পারে সেজন্যও দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। নির্বাচনের আগেই দলগুলোকে তাদের প্রতিনিধিদের তালিকা দিতে হবে যাদের তারা পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে পাঠাবে। তাহলে জনগণ ভোট দেওয়ার সময় চিন্তা করবে এই দল উচ্চ কক্ষে এদেরকে পাঠাচ্ছে। পরবর্তীতে যাতে পরিবর্তন করতে না পারে। তাই জনগণের প্রতি যদি আস্থা অর্জন করে সরকার পরিচালনা করতে হয় তাহলে জনগণের আস্থার মাধ্যমে সরকার পরিচালনা করতে হবে।

তিনি বলেন, যে দেশে জুডিশিয়ারি প্রটেকশন থাকবে না, ইকোনোমিকাল সমান অধিকার থাকবে না সেদেশে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না।

আমির খসরু বলেন, পুরোপুরি সংস্কার সম্ভব না হলেও একটা দিক নির্দেশনা থাকতে হবে। যে হাসিনা পরবর্তী কেমন বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই। মোট কথা এখানে জাতীর যে মূল্যবোধ, তাতে কোনো পার্থক্য থাকা যাবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের রাজনীতি ও ইকোনমিতে সমানভাবে অ্যাক্সেস থাকতে হবে। যার মধ্যে যে সৃজনশীলতা, তা যেন সবাই করতে পারে এমন ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্বাধীন দেশে সবাই যেন সব কিছু করতে পারে, ভোট দেওয়া থেকে শুরু করে সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারে।

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, রিফর্মের প্রথম ধাপ রাষ্ট্রের তিনটি যে প্রধান অঙ্গ আছে, তার মধ্যে প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে জুডিশিয়ারির ইন্ডিপেন্ডেন্ট। পাশাপাশি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারছি কিনা সংস্কারের মাধ্যমে। সংস্কার হতে হবে প্রতিটা নাগরিকের রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে সমান অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারছি কি না। মানুষের যেন প্রথম অধিকার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি জবাবদিহি সরকার তৈরি করতে পারে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার তো কোনো জবাবদিহিতা ছিল না, জনগণের কাছে যেতে হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় দেশের জনগণ ও নতুন প্রজন্মের মনে যে আকাঙ্ক্ষা জেগেছে তার বিপরীতে গিয়ে আগামীতে এদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। রাজনৈতিক দের কাছে পরামর্শ থাকবে, এখনই সময় সজাগ হওয়ার। কফির ঘ্রাণ নেওয়া শুরু করেন, আমার ক্ষেত্রেও নিজেকে একই কথা বলি। আমি খুব নিশ্চিত যে এবার আমাদের সংস্কারগুলো আমরা সবাই এক সঙ্গে মিলে করব।

তিনি বলেন, বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে এটা কিন্তু দল একা বাস্তবায়ন করবে এমন না। বিএনপির সঙ্গে যে ৪২টি দল যুগপতের আন্দোলনে এক হয়েছিল তাদের সঙ্গে বহু পরামর্শ ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। তবে বিএনপি একটি পরিকল্পনা করেছে, জনগণের ভোটে যদি দল নির্বাচিত হয় তারপরও একা সরকার গঠন করবে না। যাদেরকে নিয়ে আমিরা ৩১ দফা করেছি আমরা সবাই মিলে এটি বাস্তবায়ন করবো। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না। বর্তমানে রাজনৈতিক স্টেটমেন্টগুলো দেখলে এটা বোঝা যায়।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, আজকে একটি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের অটুট রাখতে হবে। যদি পিসফুলি কোনো ডেমোক্র্যাটিক অর্ডারে আমাদের যেতে হয় এর বিকল্প আর কিছু নেই। আমরা সংস্কারের যত কথাই আলোচনা করি না কেন এটাকে একটা ডেমোক্রেটিক প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর বাইরে কোনো সংস্কার টিকে থাকবে না। মনে আছে, আমরা কেয়ারটেকার সরকারে সংস্কারের যে ঐক্যমত্যে ছিলাম সেটাকে শেখ হাসিনা তো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। আমরা যদি এখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কার করে ফেলে চিন্তা করি আগামী ৫০ বছরের জন্য দেশের সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে, তাহলে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এটা ভাবা কোনো মতেই ঠিক না। প্রতিটি সংস্কারের কিছু ধাপ আছে, এটাকে মেনেই সামনে এগোতে হবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজকে যেটা সংস্কার করব, সেটাকে কয়েক বছর পর আবার চেঞ্জ করতে হতে পারে।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিনের প্রেক্ষাপটে একটা কথা বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। আমাদের পাশের দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার প্রতিক্রিয়া কিন্তু বাংলাদেশের কেউ দেখাচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশর ফ্যাসিস্টের প্রতি সমর্থন জানানোর কারণে বাংলাদেশে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখালেও দেশের মানুষ ধর্মীয়ভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। আর এই ধরনের বাংলাদেশই কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম৷ তবে ভারতের মিডিয়াগুলোয় যেসব প্রচারণা চলছে, তাতে এক সময় মনে হয় ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাবে। তবে প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় বিষয়গুলো হালকা হয়ে যাচ্ছে।

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজাজ্জের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান প্রমুখ।