চুয়াডাঙ্গা সরকারি খাদ্য গুদামে পুরাতন বস্তায় চাল ক্রয় : কোটি টাকা ওসিএলএসডি’র পকেটে

প্রতিবছর সরকারি ভাবে ধান-চাল ক্রয়ে নতুন বস্তা বরাদ্দ দেয়া হলেও চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গুদামে পুরাতন বস্তায় ধান- চাল ক্রয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ মিশন থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে গুদামের ওসিএলএসডি’র বিরুদ্ধে । মদ ও পর-নারী নিত্যসঙ্গী ওই ওসিএলএসডি অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন । কিন্তু অদৃশ্য কারণে নিশ্চুপ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামে প্রায় ৬০ হাজার পুরাতন বস্তায় চাল মজুদ রয়েছে । ওই বস্তা গুলো এম এসি এস জুট ফাইবার্স কোম্পানীর । ওই কোম্পানীর থেকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিয়ে বিগত সংগ্রহ মৌসুমগুলোতে নতুন বস্তার পরিবর্তে পুরাতন বস্তা নিয়ে ধান – চাল সংগ্রহ করেছেন গুদাম ইনচার্জ মিয়ারাজ হোসাইন । বর্তমানে গুদামের অভ্যন্তরেও মজুদ থাকা বেশিরভাগ বস্তা পুরাতন। গুদামে রক্ষিত বস্তার বেল্ট কাটলেই যার সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে।

সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এম এসি এস জুট ফাইবার্স কোম্পানীর প্রতিনিধি সেতুর সাথে যোগসাজশ করে গুদামের ওসিএলএসডি মিয়ারাজ হোসাইন পুরাতন বস্তা রিসিভ করেছেন । এ মিশন থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা । কিছু নতুন বস্তা নিলেও তা ওয়েটলেস। যার ময়েশ্চার ৭০ শতাংশ । ওই বস্তায় চাল ভরে রাখলে ময়েশ্চার আরও বেড়ে চাল নষ্ট যাওয়ার আশংকা রয়েছে ।

এম সি এস জুট ফাইবার্স কোম্পানীর থেকে ৩০ হাজার বস্তা কম নিয়ে প্রতি বস্তা বাবদ ৩০ টাকা করে নিয়েছেন ওসিএলএসডি । শুধুমাত্র কম বস্তা গ্রহণ করে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওসিএলএসডি মিয়ারাজ হোসাইন । বিগত মৌসুমে বস্তাসহ চাল কিনে কিছু বস্তার ঘাটতি পূরণ করলেও গুদামে ২০ হাজারের বেশী বস্তা ঘাটতি রয়েছে ।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি মিয়ারাজ হোসাইন মদের নেশায় আসক্ত । তিনি গুদামের অভ্যন্তরে সপ্তাহে ৩|৪ দিন মদের আসর জমান। সরকারিভাবে সংরক্ষিত খাদ্য গুদামটি এখন মাদক সেবীদের আড্ডাখানা। মাদকের পাশাপাশি কতিপয় নারী নিয়ে প্রায়ই গুদামে আড্ডা জমান ওসিএলএসডি মিয়ারাজ হোসাইন । যা গুদামে কর্মরত সকল কর্মচারী অবগত।

একটি জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি খাদ্য অফিসের অভ্যন্তরে মাদক সেবন ও নারী নিয়ে আড্ডা দেয়ায় ওসিএলএস ডি দায়িত্ব পালন নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে । সরকারিভাবে সংরক্ষিত এলাকা লেখা গুদামটি আসলে কতটুকু সংরক্ষিত তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । এছাড়া একজন মাদকসেবীর এ রকম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। জোর দাবী উঠেছে ওসিএলএসডি মিয়ারাজ হোসাইনের ডোপ টেস্ট করানোর। তার ডোপ টেষ্ট করালেই মাদক সেবনের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মিয়ারাজ হোসাইনের ডোপ টেস্ট করানোর জন্য চুয়াডাঙ্গার ডিসি, ইউএনও ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে সুপারিশের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে ।

সুত্র বলছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর আওয়ামীলীগপন্থি অধিকাংশ ডিলার পলাতক রয়েছে । এজন্য খাদ্য বিভাগ থেকে ওএমএস এর আটা’র ডিও সংশ্লিষ্ট উপজেলার ৫ কর্মকর্তার নামে প্রদান করা হয়। যা ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে ।

ওএমএস এ বরাদ্দকৃত ওই আটা ওসি এল এসডি মিয়ারাজ হোসাইন নিজের লোক দিয়ে বিক্রির নাটক করেছেন। নিজে মাস্টাররোল বানিয়ে নিজে গ্রাহকের নামে টিপ সই দিয়ে আটা বিক্রয় দেখিয়ে রীতিমত ডাকাতি করেছেন টন কে টন আটা। যাদের নামে আটা ডিও দেয়া হয়েছে তাদের নামমাত্র সুবিধা দিয়ে ৩ মাসে আটা বিক্রির মিশন থেকে প্রায় কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন ওসিএলএসডি । তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন ডিওধারী তার ডিও তে স্বাক্ষর করেননি বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে ।

সুত্রগুলো বলছে, অবৈধ উপায়ে উপার্জন করে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন ওসিএলএসডি মিয়ারাজ হোসাইন ।

যশোরের ধর্মতলা শিশু আদ-দ্বীন হাসপাতালের পাশে জমি ক্রয় করে ৬ তলা ফাউন্ডেশনের ১ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন । মহেশপুর সরকারি খাদ্য গুদামের সাথে নিজ বসতভিটায় নির্মাণ করেছেন দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকা মিরপুর ১০ এ দুই কোটি টাকা মুল্যে কেনা নতুন ফ্লাট রয়েছে । এছাড়া মিয়ারাজ হোসাইনের নামে বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ।

অভিযোগে বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গুদামে র ওসিএলএসডি মিয়ারাজ হোসাইন সমস্ত অভিযোগের বিষয়গুলো অস্বীকার করেন । তিনি দাবী করেন গুদামে কোন পুরাতন বস্তা নেই। মদ তো দূরের কথা কোন দিন বিড়ি সিগারেট স্পর্শ করেন নিই বলে জানান মিয়ারাজ হোসাইন ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসান মিয়া অভিযোগের বিষয়টি শুনে ব্যস্ততার অযুহাত দেখিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।