রোগী না থাকায় ভারতের হাসপাতাল বন্ধ হওয়ার উপক্রম

বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তের ব্যবসায়িরা জানাল তারা বাংলাদেশীদের উপর নির্ভরশীল। ভারত বাংলাদেশের পর্যটক ভিসা বাতিল এর পর থেকে বেকার হয়ে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর বেকারত্বের সাথে বাড়ছে নেশা। সীমান্তের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ব্যবসায়ি, মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায়ি, সহ এর ভ্যান রিক্সা, অটো , টোটো প্রাইভেট কার, জিপ গাড়ি  পরিবহন গাড়ির চালক সহ অসংখ্য মানুষ ছিল বাংলাদেশী পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল।ব্যবসায়িদের দাবি যদি বাংলাদেশের সাথে আমদানি রফতানি বানিজ্য চলে তাহলে কেন পর্যটক ভিসা বন্ধ রাখা হলো।এছাড়া মেডিকেল ভিসাও সীমিত করায় হাসপাতাল গুলোয়ও রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বন্দের উপক্রম দেখা দিয়েছে। আর এই ভিসা বন্ধের জন্য বেকারত্বের হার বেড়ে চুরি ছিনতাই ও নেশার দিকে ঝুকছে অসংখ্য মানুষ।
ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তের মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায়ি নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, প্রায় কুড়ি হাজার লোক পেট্রাপোল চেকপোষ্টে ব্যবসার সাথে জড়িত। আর এই কুড়ি হাজারের সাথে রয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের রুটি রুজি। যদি সরকারের সাথে বাংলাদেশের কোন উচ্চ পর্যায়ের সম্পর্কের অবনতি হয় তাহলে আমদানি রফতানি বানিজ্য চলছে কি ভাবে। বাংলাদেশের পর্যটক না আসার কারনে আমাদের শুধু পেট্রাপোল নয় কোলকাতা, দিঘা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, দার্জিলিং সহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির উপরে। ভারত সরকার যদি নিরাপত্তার জন্য ভিসা বন্ধ করে তাহলে কেন অন্যান্য বানিজ্য ঠিক রেখেছে। এটা বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ দখল এবং শুভেন্দু অধিকারীর চালাকি।
বঁনগাও মহাকুমার জয়ন্তীপুরের পেট্রাপোল এর ব্যবসায়ি ফজর আলী বলেন, আগে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার লোক প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করত। বর্তমানে তা নেমে এসেছে সারাদিন হয়ত ১০০ তে। সারাদিন উভয় দেশের সীমান্তে কোলাহল লেগে থাকত। এখানকার ব্যবসায়ি, ভ্যান, রিক্সা, অটো, টোটো প্রাইভেট কার বাস, জিপ গাড়ির  সকলে থাকত ব্যস্ত। বর্তমানে এরা সকলে বেকার হয়ে পড়েছে। সকালে পরিবার পরিজনের কথা ভেবে এরা আসে পেট্রোপোল সীমান্ত এলাকায়। সারাদিন এসে এরা তাসের আড্ডা গাজা মদ নেশা করে সন্ধ্যায় যায় বাড়িতে। আর বাড়ির লোক তাদের আশায় থেকে নেশাকারী হিসাবে বাড়ির একমাত্র উপর্জনক্ষম লোককে দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। তবে এ পথে প্রতিদিন শত শত ট্রাক  রফতানি পণ্য নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। এখানকার তরুন সমাজরা একেবারে বেকার হয়ে পড়েছে। ৫ই আগষ্ট এর পর থেকে আস্তে আস্তে এখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয় ।
পরিতোষ মন্ডল জানায় দুই দেশের মানুষ যখন যাতায়াত করবে তখন অর্থনৈতিক অবস্থা সচল হবে। এখানকার অনেক মানুষ নির্ভরশীল পর্যটকদের উপর। এভাবে বউ বাচ্চা নিয়ে ও তাদের লেখা পড়ার খরচ নিয়ে খুব অসুবিধার মধ্যে আছি।
ভারতের পরিবহন ব্যবসায়ি আলী হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সাথে যদি দেশের ক্ষতি হয় তবে সেদেশের সাথে সম্পর্ক আমাদের প্রয়োজন নেই। যে দেশের সাথে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় তাদের সাথে কিসের সম্পর্ক। কিন্তু ভারত সরকার আমদানি রফতানি ঠিক ভাবে রেখেছে। আগের চেয়ে আরো বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে কেন পর্যটক ভিসা বন্ধ ? কেন দুই দুই নিতি? এখানে চা দোকান মুদি দোকান সহ পায়ে ঠেলা ভ্যান এর চালক  সহ অসংখ্য মানুষ নির্ভরশীল ছিল পর্যটকদের উপর। এখন এই লক্ষ লক্ষ লোকের বেকারত্বের বেকার সমস্যা কে দুর করবে। বর্ডার এখন ফাঁকা।
বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবসায়ি আশাদুজ্জামান আশা বলেন, ভারত বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা বন্ধ করায় পরিবহন খাতও বন্ধ হতে বসেছে। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ভারত যাতায়াত করত অসংখ্য মানুষ। ভারতে ভ্রমণ সহ চিকিৎসা ব্যবসা বানিজ্য পড়াশুনা সহ নানান ধরনের ভিসা নিয়ে যাতায়াত ছিল। ভারত সরকার সে দেশের ভিসা বন্ধ করায় আমাদের দুরপাল্লার পরিবহন সহ এখানকার ইজিবাইক, ভ্যান রিক্সা মুদ্রা ব্যবসায়িরাও বেকার হয়ে পড়েছে। এছাড়া পর্যটকদের আনাগুনায় বেনাপোল চেকপোষ্ট থাকত জমজমাট। সেখানে এখন মানুষের যাতায়াত না থাকায় পুরা এলাকা  শুন্য।
ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তের মুদ্রা ব্যবসায়ি উত্তম কুমার বলেন, আমরা সহ এখানে রয়েছে পান বিড়ি চায়ের দোকান মুদি দোকান কসমেটিক্স দোকান বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যর দোকান। পর্যটক না আসলে সকলের ব্যবসা বন্ধ। আমরা পর্যটকদের পরিষেবা দিতাম। তার বিনিময় কিছু উপার্জন হত। এখন তারা না আসাতে এখানে কোন বেচা কেনা নেই সকলে বেকার হয়ে পড়েছে। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। এছাড়া তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বড় ব্যবসা কেন্দ্র কোলকাতা শহর। সেখানকার বড় বড় কাপড়ের দোকান, কসমেটিক্স দোকান, খেলনা দোকান, সবই বন্ধের উপক্রম। কোলকাতার ব্যবসায়িরা নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশীদের উপর। এছাড়া আগের মত মেডিকেল ভিসা ও না পাওয়ায় বাংলাদেশীরা আসতে পারছে না। যার ফলে হাসপাতাগুলোও বন্ধের উপক্রম।