ইউনূসের নেতৃত্বে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে: মির্জা ফখরুল

ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ১৫ বছর আমরা কথা বলারও সুযোগ পাইনি। মিটিং-মিছিল করতে পারিনি। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরেছে, নির্যাতন চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন সেই অধিকার ফেরত আনতে আমরা আন্দোলন করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ছাত্র-জনতা মিলে নতুন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি। সেই সরকারের প্রধান হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। আমরা বিশ্বাস করি, তার নেতৃত্বে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় খোঁচাবাড়ি হাইস্কুল মাঠে বিএনপি আয়োজিত গণসংযোগ কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই ১৫ বছরে আমাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমাদের ভাইয়ের হাত পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে। বহুবার আমাদের লোকজনকে কারাবরণ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে।
জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন? তখন উপস্থিত জনতা ‘না’ সূচক উত্তর দেন। তিনি বলেন, এখন সুযোগ এসেছে। যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।
উপস্থিত নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রিয় মা-বোনেরা, আপনারা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাস্তাঘাটে চলাফেরায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনো বিদ্যমান। এটি শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। যার ফলে দেশের অর্থনীতি আজ ভঙ্গুর। অথচ দেশের মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখেও নিরাপদ নয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতারা এখন দেশেও নিরাপদ মনে করছেন না। তারা অন্যায় করেছেন, তাই আজকের এই পরিণতি।
বিএনপি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। নতুন সরকার গঠনের পর ভালোবাসা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তুলব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা ছাত্রদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, শাপলা চত্বরে মাদ্রাসা ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছে, এখনো সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।
পরে বিকালে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের শেখবাজার এলাকায় মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এখন এমপি নেই, সমস্যা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তাই জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। সরকার যদি সত্যিই নির্বাচনের ইচ্ছা রাখে, স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ ১৫ বছর ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। আমরা নির্বাচিত হলে চাকরি, কৃষকের ন্যায্য পাওনা এবং শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করব। বিশেষ করে তরুণদের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার একটা ভালো নির্বাচন করতে পারব। আমার ভোট আমি দিতে পারব। গত ১৫ বছর আমরা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও ভোট দিতে পারিনি।
অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুল হামিদসহ বিএনপি, জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, নার্গুন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পয়গাম আলীসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ ও সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন। তিন দিনের সাংগঠনিক সফরে এসে ঠাকুরগাঁও জগন্নাথপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন। মঙ্গলবার জামালপুর ও চিলা রং ইউনিয়নে গণসংযোগ করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। বুধবার দেবীপুর ও বড়গাঁ ইউনিয়নের গণসংযোগ শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।