অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র পরিত্যাগ করে নিজেদের বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। ৪০ বছর ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালানো কুর্দি এই গোষ্ঠীর বিদায়ে এক যুগসন্ধিক্ষণের সূচনা হলো মধ্যপ্রাচ্যে।
সোমবার কুর্দিদের ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম ফিরাত নিউজ এজেন্সির বরাতে কাতারভিত্তিক আলজাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
এর মাধ্যমে কুর্দিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের স্বপ্নও শেষ হলো বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন থেকে কুর্দি জনগণের অধিকার আদায়ে তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথেই হাঁটবে।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে আটক পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওজালান দলের সব সদস্যকে অস্ত্র পরিত্যাগ করে সংগঠন গুটিয়ে নিতে বলেন। তার আহ্বান অনুসারেই রোববার (১১ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্তির ঘোষণা আসে।
১৯৮৪ সালে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বাধীন কুর্দিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে পিকেকে। এরপর থেকে চলমান সহিংসতায় প্রাণ গেছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের।
তুরস্কের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশই কুর্দি। দীর্ঘদিন ধরে তারা স্বতন্ত্র রাষ্ট্র বা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। তবে সময়ের পরিক্রমায় পিকেকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে সরে এসে কুর্দিদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকারের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করে।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পিকেকে বরাবরই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত। তুরস্ক ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র এ গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।
অস্ত্র পরিত্যাগের ঘোষণা দিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে পিকেকে বলেছে, ‘আমরা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব শেষ করেছি। এখন সময় এসেছে সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ ছেড়ে দেওয়ার। ’
সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, কুর্দিদের সমস্যা সমাধানে গণতান্ত্রিক পন্থার বিকল্প নেই। সহিংসতা নয়, বরং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াই এখন একমাত্র পথ।
৭৬ বছর বয়সী আবদুল্লাহ ওজালান ১৯৯৯ সাল থেকে ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে মর্মর সাগরের একটি দ্বীপে একক সেলে বন্দি রয়েছেন। দল বিলুপ্তির পর তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুর্কি সেনাবাহিনীর টানা অভিযানে পিকেকে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ইরাক ও সিরিয়ায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সেখানেও তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।