দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপটি গভীর হয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে ওই অঞ্চলে আগামী তিনদিন ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আকাশে মেঘের কারণে সমুদ্র বন্দরে ৩ এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বস এবং নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে।
ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয়তার কারণে আজ সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (১৮৮ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, একদিকে লঘুচাপ অন্যদিকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আগামী চার-পাঁচ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে টানা নয়, থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে সারা দেশে।
আবহাওয়া সতর্কবার্তা
সমুদ্র বন্দরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বজ্রমেঘ তৈরি হচ্ছে এবং বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিসহ দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়।
আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয়তার কারণে আজ সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (১৮৮ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজারে পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে খুলনায় ১১১ মিলিমিটার। এছাড়া পটুয়াখালী খেপুপাড়া ৮৬, নারায়নগঞ্জে ৮৫, কক্সবাজার ৮১, চট্টগ্রামে ৭৮, নোয়াখালীর হাতিয়া ৬৮, গোপালগঞ্জে ৬২, ফেনী ৫৮, ভোলা ৫৬, কয়রা ও মাইজদীকোর্ট ৫৫, কুমিল্লায় ৫৩, মোংলা ৪৮, পটুয়াখালী ৪৯, বরিশাল ৩৭, ঈশ্বরদীতে ৪৩, কুতুবদিয়া ৩৮, ঢাকায় ৩৬, চুয়াডাঙ্গা ৩২, সাতক্ষীরা ৩০, কুমারখালি ২৯, যশোর ২২, চাঁদপুর ২০, রাঙ্গামাটিরমতে ১৮, বান্দরবান ১৬, টাঙ্গাইলে ১২, ফরিদপুরে ১৫, নীলফামারীর ডিমলা ১৩, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ১১, নেত্রকোনা ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর বাইরে প্রায় সারা দেশে কম বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বিহার, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাংশ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হওয়ার সম্ভবানা রয়েছে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
একইভাবে বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এছাড়া শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।