যশোর জেনারেল হাসপাতালে অবহেলায় নারীর মৃত্যুর অভিযোগ, স্বজনদের বিক্ষোভ

যশোর জেনারেল হাসপাতালে ওয়ার্ডবয়ের অবহেলায় এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অক্সিজেন না পেয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন নিহত নারীর পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত ১০টার পর। একপর্যায়ে স্বজনরা হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের সামনে বিক্ষোভ করেন। বিশেষভাবে দায়ী করা হয় ওয়ার্ডবয় রেজওয়ানকে। তার শাস্তির দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। মুহূর্তের মধ্যে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত রেজওয়ান। পরে ওই ইউনিটের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

মৃত জাহানারার ছোট ছেলে, যশোর চুরামনকাটির মাহামুদুল হাসান বলেন তার মা হৃদরোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। জরুরি বিভাগে আনার পর দীর্ঘ সময় পর তাকে নেওয়া হয় ৩ তলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। কেটে যায় প্রায় এক ঘণ্টা। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে সে সুবিধা না থাকায় বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়। পরে রিপোর্ট ইন্টার্ন চিকিৎসককে দেখালে তারা জাহানারাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে রেফার করেন। ফের জরুরি বিভাগ থেকে কাগজপত্র বদলিসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও দেড় ঘণ্টা কেটে যায়।

করোনারি কেয়ার ইউনিটের নিচতলায় আনা হলে দেখা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সজল অধিকারী চেম্বারে নেই। তাকে তিনতলা থেকে ডেকে আনা হয়। এরমধ্যেই জাহানারার অবস্থার আরও অবনতি হয়। তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না। অক্সিজেন দেওয়ার অনুরোধ জানালে কিছু সময় পর ডা. সজল ওয়ার্ডবয় রেজওয়ানকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়ে চলে যান।

এরপর শুরু হয় ওয়ার্ডবয় রেজওয়ানের তালবাহানা। একদিকে রোগী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, অন্যদিকে রেজওয়ান স্বজনদের সঙ্গে নানা অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। কখনো বলেন সারের অনুমতি লাগবে, কখনো বলেন আরেকজনের অনুমতি লাগবে। এইভাবে সময় নষ্ট করতে থাকেন।

জাহানারার ছেলে অভিযোগ করেন, রাত ১০টার পর তার মায়ের শ্বাস নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। রেজওয়ান তখন এসে তার মায়ের বুকে চেপে ধরে রাখেন দীর্ঘক্ষণ। শেষমেশ মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মায়ের মৃত্যু হয়।

জাহানারার আরেক ছেলে ওহেদুজ্জামান মিলন বলেন, হাসপাতালে আমার মায়ের ন্যূনতম সেবাও দেওয়া হয়নি। উল্টো আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও অক্সিজেন না দিয়ে রেজওয়ান আমাদের হতাশ করেন। মা ছটফট করছিলেন, আর রেজওয়ান হাসিঠাট্টা করছিল। অন্য রোগীর স্বজনরাও অনুরোধ জানান, কিন্তু সে কিছুই শোনেনি।

স্বজনদের অভিযোগ, রেজওয়ানের এমন অমানবিক আচরণ একবারের নয়, বহুবার এমন ঘটনার সাক্ষী হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও স্বজনরাও। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা করোনারি কেয়ার ইউনিট ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ঘটনাস্থলে আসেন চিকিৎসক ডা. সজল অধিকারী। তাকেও তোপের মুখে পড়তে হয়। অভিযুক্ত রেজওয়ান তখনই সটকে পড়ে। ডা. সজল অধিকারী উপস্থিত জনতাকে আশ্বস্ত করেন, দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর বিক্ষুব্ধরা হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।