কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তৃতীয় দিনের মতো বুধবার (২৫ জুন) কলমবিরতি চলছে বেনাপোল কাস্টম হাউসে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খানের অপসারণ ও প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মসূচি চলছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই কলমবিরতি চলছে। এর আগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাজ হয়েছে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে। এছাড়াও বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি এবং চেকপোস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা চালু রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন।
এদিকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। সরকার প্রত্যাশা করে যে, এই আলোচনার মাধ্যমে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাস্টম হাউসে আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত কোনও শুল্কায়নের কাজ হবে না। ১২ টার পর অফিস খোলা থাকলেও কর্মকর্তাদের টেবিলে দেখা যায়নি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কাস্টম হাউসের অনলাইন সার্ভার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকার কারণে আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত কোনও বিল অব এন্টি দাখিল করা যাচ্ছে না। ৫টা পর্যন্ত সরকারি অফিসের সময় হওয়ায় ৫টা পর আর কোন কাজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রয়েছে। সকালে আইজিএম ইস্যু করা হলেও ১২ টার পর আইজিএম ইস্যু বন্ধ রয়েছে। আগের ইস্যু করা আইজিএমের পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। এতে পণ্য খালাসে সমস্যায় পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘কলমবিরতির কারণে আমাদের পণ্য খালাসে জট তৈরি হচ্ছে। যদিও পরে কর্মকর্তারা ফাইলে সই করেছেন, কিন্তু ব্যাংক বিকাল ৪টার পর শুল্কের কোনও টাকা জমা নেয় না। এতে পুরো প্রক্রিয়াই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।’
বেনাপোল কাস্টম হাউসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, গত ২২ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘জারি করা প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে শুধু আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রফতানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দফতরে সোম ও মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি, কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়। বুধবার ও বৃহস্পতিবার (২৫ ও ২৬ জুন) দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে। আগামী ২৭ জুনের মধ্যে প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে এবং এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণ না করা হলে আগামী ২৮ জুন থেকে কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দফতরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।
এরই মধ্যে ২২ জুন থেকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আবারও আন্দোলন শুরু হলে অর্থ উপদেষ্টা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল ৫টায় বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদেরকে তার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২৫ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকার প্রত্যাশা করে যে, এই আলোচনার মাধ্যমে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসানপূর্বক সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা সম্ভব হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যার যার দপ্তরে অবস্থান করে অর্থবছরের শেষ কর্মদিবসগুলোতে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে মনোনিবেশ করার জন্য অর্থ উপদেষ্টা অনুরোধ করছেন।