হোটেলে দম্পতি-সন্তানের মৃত্যু: খোলেনি রহস্যের জট

রাজধানীর মগবাজারে একটি আবাসিক হোটেলে সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন, তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে নাইম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বাড়ির কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে রিমান্ডে কোনো স্বীকারোক্তি পায়নি পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আনুমানিক ৬০ থেকে ৬২ বছর বয়সী রফিকুল ইসলামকে দুদিনের রিমান্ডে নানা কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তবে তিনি দম্পতি ও সন্তানের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি।
গত ২৮ জুন ছেলে নাইম হোসেনের চিকিৎসার জন্য লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন মনির হোসেন ও তার স্ত্রী। বিকেলে তারা মগবাজারের ‘হোটেল সুইট স্লিপ’-এ ওঠেন। রাতে খাবার খাওয়ার পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বিষয়টি এক আত্মীয়কে জানান। পরদিন ২৯ জুন সকালে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় সেদিনই কেয়ারটেকার রফিকুলকে আটক করা হয়।

মনির হোসেনের ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় দুটি বাড়ি রয়েছে এবং হাইওয়ে রুটে চলাচলকারী একটি যাত্রীবাহী বাসও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ বাড়িগুলোর দেখভাল করছিলেন কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, ২০০০ সালের পর থেকেই মনিরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় রফিকুল পুলিশকে জানিয়েছেন, মনির তার কাছে প্রায় চার লাখ টাকা পাবেন। এছাড়া বাড়ি করার আগে জমি কেনার সময়ও মনিরকে চুক্তি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছিল। এসব আর্থিক বিষয় নিয়েও তদন্ত চলছে।

রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, দম্পতি ও সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। সেই মামলায় কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় নানা কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তবে হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। প্রয়োজনে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

রফিকুল ইসলামের পাশাপাশি মনিরের স্ত্রীর সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিল কি না, সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও অপেক্ষমাণ রয়েছে।
৩০ জুন সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে তিনটি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. জাকিয়া তাসনিম জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে নিশ্চিত হতে রক্ত ও ভিসেরা নমুনা মহাখালীর পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

এর আগে রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জালাল উদ্দিন লাশগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। তিনি জানান, তিনটি লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। প্রাথমিকভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়াকেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে মনে হচ্ছে, তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।