সিরিজ বাঁচানোর লড়াই টাইগারদের!

স্পোর্টস ডেস্ক: আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের দল আজ কি করবে? এ প্রশ্ন টাইগার ক্রিকেট-ভক্তদের মুখে মুখে। হারলেই সিরিজ হাত ছাড়া। সেই সঙ্গে বাড়বে লজ্জার ওজনও। র‌্যাঙ্কিংয়ে এমনিতেই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। আজ হারলে আরো নিচে নামার রাস্তা তৈরি হবে। তাহলে পথ একটাই, চাই জয়।

এজন্য মন থেকে উড়িয়ে দিতে হবে আফগান লেগ ভেলকির ভয়। রশিদ খান আর মুজিব উর রহমানকে তামিমের আসল রূপ দেখাতে হবে। মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহদের অভিজ্ঞতার সবটুকু নিংড়ে দিতে হবে। তরুণ সাব্বির রহমান, লিটন দাস, মোসাদ্দেকদের দেখাতে হবে ঝড়ের দাপট। সেইসঙ্গে অধিনায়ক সাকিবকে হতে হবে ব্যাটে-বলে আরো প্রত্যয়ী। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টাইগাররা মাঠে নামছে আজ। দেরাদুনে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানে হেরেছে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে আটে থাকা বাংলাদেশ। সেখানে এখনো টেস্ট না খেলা আফগানরা এ জয়ে সিরিজটাও নিজেদের করে নেয়ার স্বপ্ন দেখছে। শুরু থেকেই তারা পাত্তাই দিচ্ছিল না সফরকারীদের। প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ নৈপুণ্যে ৮ উইকেটে জিতে সেই বার্তাও দিয়েছিল। কিন্তু তাতে সতর্ক হয়নি টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। যার খেসারত দেয় সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে।

আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের আগে টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ছিলেন ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত। দেশে ফিরেও তিনি ভারতে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ২ দিন পর। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ইংল্যান্ডে বিশ্ব একাদশের হয়ে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে ভারতে দলের সঙ্গে যোগ দেন দেরিতে। টাইগারদের এ সিরিজে তুরুপের তাস হতে পারতেন যে পেসার মোস্তাফিজুর রহমান তিনি ইনজুরিতে দলের বাইরে। আইপিএল থেকে তিনি ফের বয়ে নিয়ে এসেছেন ইনজুুরি। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলে প্রধান কোচ না থাকায় সব যেন এলোমেলো। কোর্টনি ওয়ালশকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিলেও সেটিও যেন শেষ মুহূর্তে। বলতে গেলে যে সিরিজটি র‌্যাঙ্কিংয়ের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ, সেটির আগেই ছিল দারুণ অবহেলা।

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারের পরও অধিনায়ক সাকিব যেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে মনে হয়নি খুব একটা বোধোদয় হয়েছে। আর সংবাদ সম্মেলনে এসে লিটন কুমার দাসের বক্তব্যে স্পষ্ট তাদের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনাই ছিল না। বিশেষ করে আফগান দুই লেগস্পিনারকে কিভাবে সামলাবেন তাই যেন বুঝতে পারছেন না তারা। যে কারণে রশিদ ৩ উইকেট নিতে খরচ করেছেন মাত্র ১৩ রান। কারণ তাকে খেলতেই চায়নি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। অথচ দেশ ছাড়ার আগে সাকিব বলেছিলেন, ও (রশিদ) ভালো বোলার কিন্তু খেলা যাবে না- এটি নয়। ওকে নিয়ে আমরা

নই, আপনারা (সংবাদমাধ্যম) আলোচনা করছেন।’ অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচে সাকিবের ভুলও কম নয়। যেখানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এসে নিজের প্রথম ওভারেই ১ রানে উইকেট পেলেন ২টি। সেখানে তাকে আর বোলিংয়েও ফিরানো হয়নি। অথচ কারণ হিসেবে সাকিব বলেন, স্পেশালিস্ট বোলার না আনলে ঝুঁকি থাকতো।’

অন্যদিকে দেরাদুনের উইকেট নিয়েও টাইগারদের মধ্যে ছিল দ্বিধাদ্বন্দ্ব। শুরুতে পেস সহায়ক উইকেট ভেবে চার পেসার নিয়ে দল ঘোষণা করা হয়। এরপর মোস্তাফিজ যখন ছিটকে পড়লেন তখন তার পরিবর্তে আরেক পেসার আবুল হাসান রাজুকেই দলে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। এমনকি প্রস্তুতি ম্যাচে হারের পরও তারা উইকেট নিয়ে যে ভুল ভাবনায় ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ছয় বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা রাজুই কেন প্রথম ম্যাচের একাদশে? তাও পেস অলরাউন্ডার হিসেবে। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে সৌম্য সরকার কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন অলরাউন্ডার হিসেবে। তাহলে কেন সে নয়? পরীক্ষাটা প্রথম ম্যাচেই কেন!

আফগানদের বিপক্ষে ১৬৮ রান তাড়া করতে গিয়ে ১২২ রানে গুটিয়ে যায় দল। বলতে গেলে এ হারের পেছনে টাইগারদের অপরিকল্পিত ক্রিকেটেরই ছাপ স্পষ্ট ছিল। তামিম, সাকিব, মুশফিকরা দায়িত্ব নিতে পারেননি। দলের ভরসা হতে পারেনি তরুণ সাব্বির, সৈকতরা। ৮-এ সৌম্য, মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা আরিফুল হককেও খেলানো যেত। কারণ তারা ছিলেন পরীক্ষিত। তাদের না খেলানো ঝুঁকি বলা হোক আর বোকামি, সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারে এখন চ্যালেঞ্জ কঠিন হয়েছে বাংলাদেশের।