ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরে উন্নত ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি। তথ্য সচিব আবদুল মালেক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শিল্পী, কলা-কুশলীকে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ প্রদান করা হয়। এবার চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক এবং চিত্রনায়িকা ফরিদা আক্তার ববিতা যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা পুরকার লাভ করেন। পরে নিজস্ব অনুভূতিও ব্যক্ত করেন ফারুক এবং ববিতা।
পুরস্কার পাবার পর প্রথমে ববিতা তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাক ভাইকে মনে পড়ছে আজ। বাংলাদেশে রাজ্জাক ভাইয়ের নামে একটি ফিল্ম আর্কাইভ করার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করছি। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন শিল্পীদের দু:সময়ে সাহায্য করেছেন। তিনি চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষ। আর তরুণ অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে আমি অনেক সম্ভাবনা দেখেছি, তাদের আরো মন দিয়ে কাজ করতে হবে। চলচ্চিত্রশিল্পকে তাদেরকেই এগিয়ে নিতে হবে। আর ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে আমার সোনালী স্মৃতি রয়েছে। ফারুক ভাই বড় মাপের একজন অভিনয়শিল্পী। আমি আপনাদেরই একজন। আপনাদের ভালোবাসায় আমি ববিতা হয়েছি। সকলে ভালো থাকবেন।
চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘আজীবন সন্মাননা পুরস্কার’-এই সম্মান এমনিতে পাওয়া যায় না। এই সম্মান অর্জনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। এই সম্মান আমার একার না, আপনাদের সবার। আজ আমার বার বার একটি নাম মনে পড়ছে, তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উনার পাস করা আইনে আমাদের চলচ্চিত্রের পথচলা শুরু। বর্তমানে ডিজিটাল চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য কিছু আধুনিক মেশিন প্রয়োজন এবং সিনেমা হল মালিকদের অল্প সুদে সিনেমা হল নির্মাণের জন্য ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করে দেবার জন্য সরকারের নিকট আমার আবেদন থাকবে।
এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা।
এছাড়া অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী অনুপমা মুক্তি, কোনাল, বেলাল খান গান পরিবেশনা করেন।
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী ২০১৬ সালে যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন ফরিদা আক্তার ববিতা ও আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।
অনান্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : অজ্ঞাতনামা (ফরিদুর রেজা সাগর), শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : ঘ্রাণ (এস. এম. কামরুল আহসান), শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : জন্ম সাথী (একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক : অমিতাভ রেজা চৌধুরী (আয়নাবাজি), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে : চঞ্চল চৌধুরী (আয়নাবাজি), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে : যৌথভাবে নুসরাত ইমরোজ তিশা (অস্তিত্ব) ও কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল),শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে : যৌথভাবে আলী রাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে : তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ),শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে : শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী : আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি (শঙ্খচিল), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক : ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে), শ্রেষ্ঠ গায়ক : ওয়াকিল আহাদ (চলচ্চিত্র : দর্পণ বিসর্জন),শ্রেষ্ঠ গায়িকা : মেহের আফরোজ শাওন (চলচ্চিত্র : কৃষ্ণপক্ষ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে), শ্রেষ্ঠ সুরকার : ইমন সাহা (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে),শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার : তৌকীর আহমেদ (অজ্ঞাতনামা), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার : যৌথভাবে অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক : ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি), শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক : উত্তম গুহ (শঙ্খচিল),শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক : রাশেদ জামান (আয়নাবাজি),শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক : রিপন নাথ (আয়নাবাজি), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা : যৌথভাবে আব্দুস ছাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি), শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান : মাহবুব রহমান মানিক (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)।