সরেজমিনে দেখা যায়, ১৩ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে নামমাত্র আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। অধিকাংশ ওয়ার্ডে ফ্যান ঘুরছে না। পর্যায়ক্রমে ফ্যান সার্ভিস দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া বন্ধ রয়েছে এক্স-রে ও এমআরআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আল্ট্রাসনোগ্রাম হচ্ছে নামমাত্র। অনেক প্যাথলজির কাজেও বাধা পড়ছে বিদ্যুতের কারণে।
হাসপাতালের বাথরুমে পানির সমস্যা এখনো দেখা দেয়নি। তবে অন্ধকার পরিবেশ ও গরমের কারণে অনেক ভর্তি রোগী হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন।
সুমাইয়া আক্তার নামের এক রোগীর স্বজন গত ১৮ জুলাই (বুধবার) থেকে এমআরআই করানোর জন্য ঘুরছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় রোববার যোগাযোগ করতে বলেছে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
তবে আজ (রোববার) ওই বিভাগে গেলে সেখানে কাউকে না পেয়ে পরিচালকের অফিসে আসেন এই রোগীর স্বজনরা।
সুমাইয়া আক্তার বলেন, রোগীর এমআরআই বাইরে থেকে করানোর জন্য বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ কবে আসবে তা সঠিক করে কেউ বলতে পারছে না।
বিদ্যুৎ না থাকায় রোববার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ভর্তি বাতিল করে ঢাকা মেডিকেলে রোগী নিয়ে গেছেন রোকন নামের এক রোগীর স্বজন।
তিনি বলেন, ছয় দিনে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয় নাই যে হাসপাতালে, সেখানে কবে বিদ্যুৎ আসবে তা কে জানে। এ জন্য ঢাকা মেডিকেলে চলে যাচ্ছি।
রোববার সকালে কাইয়ুম নামের এক রোগীর স্বজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে তার ভাইয়ের পা ভেঙে যায়। সরকারি হাসপাতাল বাসার কাছে থাকায় এখানে ভর্তি করান। কিন্তু ডাক্তার যে এক্স-রে করতে দিয়েছেন তার জন্য মালিবাগে সকাল থেকে দুইবার যেতে হয়েছে।
ওই রোগীর স্বজনের প্রশ্ন বিদ্যুৎ একদিন না থাকতে পারে, কিংবা কোনো সমস্যা হতেই পারে। তাই বলে এতোদিন বিদ্যুৎ ছাড়া কিভাবে হাসপাতাল চলছে?
এ ব্যাপারে মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ছয় দিন ধরে বিদ্যুৎ সমস্যা। আমরা বারবার পিডব্লিউডি অফিসে যোগাযোগ করছি। তারা সময় দিয়েছেন তিন দিন। কিন্তু শুক্র, শনি সরকারি ছুটি থাকায় আজও সমাধান হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়ার্ডের এক পাশের ফ্যান চালু রাখা হলে অন্য পাশের ফ্যান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ওয়ার্ড ছাড়া অন্য স্থানের লাইট অফ রাখতে হচ্ছে।
রোগীদের স্বজনদের ভীড় আমার কক্ষের সামনে সকাল থেকে ছিলো। কিন্তু আমরা কী করবো?
তিনি বলেন, সরকারি প্রতিটি কাজের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়। বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার সমস্যা হয়েছে। ওই অংশের জন্য টেন্ডার হবে তারপর বিদ্যুৎ আসবে। কিন্তু এই সময় কিভাবে হাসপাতাল চালাবো বলেন?
হাসপাতালের পরিচালক আরো বলেন, অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, সিসিইউ এসব চালু রাখা হয়েছে। তবে দুটি জেনারেটর কতো লোড নিবে। এই দুটা জেনারেটর নষ্ট হয়ে গেলে হাসপাতাল বন্ধ করা ছাড়া গতি থাকবে না।
মুগদা হাসপাতালের বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়ে পিডব্লিউডি’র এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আজকের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে হাসপাতালে।
তিনি বলেন, সরকারি কাজে সময় লাগে। কিন্তু হাসপাতাল বিধায় দ্রুত কাজ শেষ করছি।
ছয় দিন কি কম সময়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঝে সরকারি ছুটি ছিলো। এরপর ট্রান্সমিটারের যে অংশ নষ্ট হয়ে গেছে তা বানাতে সময় লাগে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রাজধানীর মুগদা থানায় অবস্থিত। এটি রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত চতুর্থ সরকারি মেডিকেল কলেজ।
এটি ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নামেও পরিচিত। যার নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন ২০১৩ সালের জুলাইয়ে।
২০১৪ সালের শুরুর দিকে রোগী ভর্তি শুরু হয়। ১৩ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটিকে ২০১৫ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মেডিকেল কলেজ ঘোষণা করেন। কলেজের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কলেজটিতে দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষাদান চলছে।