বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে তার কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে মন্তব্য তার ব্যক্তিগত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের।
অপরদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে সিইসির সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
বৈঠকে জাতীয় সংসদ ও তিন সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন তিনি। নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় ইসি কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে সে বিষয়েও কথা বলেছেন এ কূটনৈতিক।
বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এ সময় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অন্য নির্বাচন কমিশনাররা এ বৈঠকে ছিলেন না।
বৈঠকের পর বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তিনি সব সময়ই আশাবাদী। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার অনেক উদাহরণ আছে।
তিন সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী কিনা জানতে চাইলে বার্নিকাট আশা প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র চায় এবং বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের লক্ষ্যেই কাজ করছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের পর সরকার ও আওয়ামী লীগ থেকে সমালোচনা করা হয়।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মার্শা বার্নিকাট বলেন, সমালোচনাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সমালোচনা গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশে সাহায্য করে। তার দেয়া বক্তব্যের পর সরকারের যারা দ্বিমত পোষণ করেছেন, সেটা তাদের বলার অধিকার আছে বলে জানান।
এ ছাড়া বলেন, গাজীপুরের সিটি নির্বাচন নিয়ে দেয়া বক্তব্য তার ব্যক্তিগত মত নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়েই তিনি কথা বলেছেন। কূটনৈতিক হিসেবে তিনি ব্যক্তিগত বক্তব্য দিতে পারেন না।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আরও বলেন, তিন সিটি নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাকে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে গত ১২ জুলাই আমরা বৈঠক করেছি। বুধবার তিন বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, তিন সিটি নির্বাচনের বিষয়ে তিনজন নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা সার্বিক দিকগুলো দেখভাল করছেন। তারা নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো আছে- তা উনাকে অবহিত করা হয়েছে।
সচিব বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানতে চেয়েছেন। তাকে আমরা জানিয়েছি, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি।
সচিব জানান, যেহেতু তিনি এদেশ থেকে শিগগিরই চলে যাবেন। তাই এটা উনার বিদায়ী সাক্ষাৎ। তার পাশাপাশি নির্বাচন যেহেতু এ দেশের একটি বড় ইভেন্ট, তাই নির্বাচনের বিষয়ে উনারা আলোকপাত করেছেন।
সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে- এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। তিন সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি জানতে চেয়েছেন, নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে কীভাবে তদন্ত করা হয় এবং তদন্তের পর কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাকে জানিয়েছেন, খুলনা সিটি নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে তার প্রত্যেকটির তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গাজীপুরের অনিয়ম নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের জবাব ইসি চেয়েছে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, না ওইভাবে আলোচনা হয়নি। যেহেতু উনি একজন কূটনৈতিক। উনি বিষয়টি না তুললে আমরা সাধারণত প্রশ্ন তুলি না।
তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সচিব বলেন, উনারা সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমূখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এমনটি আশা করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেন, তিন সিটিতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই এবং পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন জানান, গণতান্ত্রিক দেশে অনেকেই অনেক কিছু বলতে পারে। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ বাদে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে চাননি।