কেন পদত্যাগ করলেন নিকি হ্যালি?

সবাইকে অবাক করে দিয়ে পদত্যাগ করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, বিশ্বস্ত বলে পরিচিত নিকি হ্যালির পদত্যাগের খবর সবাইকে চমকে দিয়েছে। এমনকি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।

তার পদত্যাগের খবরটি প্রথম প্রকাশ করেন অ্যাক্সিওস জোনাথন শন। এ খবর শুনে প্রথমে যে প্রতিক্রিয়া বেরিয়ে আসে তা হলো- কি! নিকি হ্যালি পদত্যাগ করেছেন? যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সিএনএন’কে বলেছেন, হ্যালি পদত্যাগের কথা শুধু তার স্টাফদেরকে জানিয়েছেন মঙ্গলবার সকালে।

এ ঘটনা জানেন এমন আরেকটি সূত্র বলছে, জন বল্টন ও মাইক পম্পেও এ খবর জেনে বিস্মিত হয়েছেন। তারা পরের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন- কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন?
দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরই এখন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

কি কারণে নিকি হ্যালি এমন সিদ্ধান্ত নিলেন সে বিষয়ে সিএনএন বলছে, আমরা আসলে কিছুই জানি না। বিস্ময়কর এমন পদত্যাগের পর তার সঙ্গে বসে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অথবা তার পদত্যাগের কারণ জানার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে নিকি হ্যালি এরই মধ্যে জাতিসংঘে তার প্রায় দু’বছরের মেয়াদ শেষ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি এক বছর সাত মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। হয়তো তাই তিনি ভেবে থাকবেন- এটা তার বিদায় নেয়ার কারণ।

ওদিকে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, বছরের শেষের দিকে দায়িত্ব ছাড়বেন নিকি হ্যালি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসে নিকি হ্যালিকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন ডনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি হ্যালির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, হ্যালি আমার কাছে বিশেষ একজন মানুষ। তিনি কর্মক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখিয়েছেন। চমৎকার একজন মানুষ তিনি। এসময় নিকি হ্যালিও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তবে ঠিক কি কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন তা পরিষ্কার করেননি।

কয়েকটি সূত্র বলছে, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হ্যালি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কিন্তু হ্যালি এসব গুঞ্জন নাকচ করে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, আগামী নির্বাচনে তিনি লড়ছেন না। বরং তিনি ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারণা করার ঘোষণা দেন।

কে হচ্ছেন জাতিসংঘে পরবর্তী মার্কিন দূত
আগামী ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘে পরবর্তী মার্কিন দূতের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই এই পদের বিপরীতে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে ট্রাম্প কন্যা ইভাঙ্কা অন্যতম। খোদ প্রেসিডেন্টই ইভাঙ্কাকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন দূত হিসেবে ইভাঙ্কা বিস্ময়কর হবেন। কিন্তু তার মানে এই না যে, তিনি ইভাঙ্কাকেই ওই পদে নিয়োগ দিচ্ছেন। চূড়ান্তভাবে ইভাঙ্কা যদি দূত হিসেবে নিয়োগ পান, তাহলে স্বজনপ্রীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। যদিও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ইভাঙ্কা জাতিসংঘে পরবর্তী মার্কিন দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার খবর নাকচ করে দিয়েছেন।

এ ছাড়া ট্রাম্পের সাবেক সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দিনা পাওয়েলের নাম আলোচনায় রয়েছে। তিনি ইভাঙ্কা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ। ব্যাংকারের পেশা ছেড়ে হোয়াইট হাউসে চাকরি নিয়েছিলেন। বছরখানেক আগে হোয়াইট হাউস ছেড়ে তিনি পুরনো পেশায় ফিরে যান। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি ট্রাম্পের বেশ আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। দিনা পাওয়েল মার্কিন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া ট্রাম্পের বৈদেশিক সফরগুলোর অন্যতম পরিকল্পনাকারী তিনি। একই সঙ্গে জার্মানিতে নিযুক্ত বর্তমান মার্কিন দূত রিক গ্রেনেলের নামও আলোচনায় রয়েছে। তিনিও ট্রাম্পের বেশ ঘনিষ্ঠ। তবে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রিক গ্রেনেলের নাম নেই বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।

মঙ্গলবার এয়ারফোর্স ওয়ানে ওঠার সময় তিনি বলেন, হ্যালির বিপরীতে পাঁচ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তার কাছে রয়েছে। কিন্তু গ্রেনেল তাদের মধ্যে নেই। ট্রাম্প বলেন, ‘সে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সে এতই ভালো করছে যে, আমি তাকে সরাতে চাই না। ব্যক্তিগতভাবে আমি রিককে তার বর্তমান জায়গাতেই রাখতে চাই।