একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেননি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ার ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চেয়ে দলের বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচন পরিচালনাকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফেনী-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিকল্প হিসেবে দলের মনোনয়ন দেয়া হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে। এই আসন থেকে যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনুকেও মনোনয়ন দেয়া হয়। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমার কখনোই নির্বাচন করার সখ ছিলো না। পরিবারের মধ্যে আমার বাবা-ভাই নির্বাচন করেছেন। অতীতে আমি কখনো নির্বাচনে অংশ নেইনি।
এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা গ্রেপ্তার-মামলা-হয়রানির মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। মিন্টু বলেন, এরকম অবস্থায় আমি মনে করেছি- নির্বাচনে অংশগ্রহণের চেয়ে নির্বাচন পরিচালনায় আমার সময় ও অবদান রাখা উচিত।
সেজন্য দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমি নির্বাচন না করে দলের নির্বাচনের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ নির্বাচন পরিচালনায় দলে এখন পর্যাপ্ত ও অভিজ্ঞ লোকজনের অভাব রয়েছে। সেজন্য আমি মনে করছি, দলের এরকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নির্বাচন করার চেয়ে নির্বাচনী কাজে সময় ও শ্রম দেয়া জরুরি। তিনি বলেন, দলও মনে করে যে- নির্বাচন পরিচালনার কাজে আমি সম্পৃক্ত থাকি। আমার মনোনয়নপত্র দাখিল নিয়ে যেসব খবর গণমাধ্যমে আসছে তা সঠিক নয়। এ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল। অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বরিশাল-২ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়। এই আসনে বিএনপির সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল ও বিএনপি নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুকেও মনোনয়ন দেয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আলাল প্রার্থী হয়েছিলেন ঢাকা-১৩ আসনে।
কিন্তু বিএনপি থেকে এবার সেখানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও আতাউর রহমান ঢালীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। যোগাযোগ করা হলে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, আমাকে বরিশাল-২ আসনে নির্বাচন করার জন্য দল থেকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের আদর্শিক অভিভাবক দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও আমাদের শক্তির উৎস তারেক রহমান এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। এই কারণে আমিও অংশ নিচ্ছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নেয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই আমি মানি। দলের সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি আছি। কিন্তু প্রচার মাধ্যমে আমি দেখেছি, আমার আসনে আরো দুইজন নেতাকে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন আমি মনোনয়ন জমা না দিলেও দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে।
এ ছাড়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে মনোনয়ন দেয়া হয় ঢাকা-৯ আসনে। কিন্তু তার পছন্দের আসন ঢাকা-৮। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এ আসনে মনোনয়ন না পাওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ঢাকা-৮ আসনের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য গতকাল বিকালে হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের পক্ষে দুইজন ছাত্রনেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে যান। এ সময় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান। আসরের নামাজের পর কার্যালয়ে আসেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের মনোনয়নের বিষয়ে কথা বলার জন্য মির্জা আব্বাস কার্যালয়ে আসেন। কিন্তু সন্ধ্যার পরও সোহেলকে ঢাকা-৮ আসনের মনোনয়ন না দেয়ায় ওই দুই ছাত্রনেতা ফিরে যান। ১৮ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন কারাগারে রয়েছেন হাবিব-উন- নবী খান সোহেল। এর আগে সোহেলের পক্ষে ঢাকা-৯ আসনের দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলা হয়।
ঢাকা-৯ আসনে জমা নেয়নি আব্বাসের ফরম
এদিকে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলেও ঢাকা-৯ আসনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মনোনয়নপত্র জমা নেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা। সময়ক্ষেপণ করে ৫টা বাজার অজুহাতে শেষ পর্যন্ত তা গ্রহণ না করার অভিযোগ করেছেন মির্জা আব্বাসের প্রতিনিধিদলের সদস্য খন্দকার সিকান্দার।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা সাড়ে ৪টায় মির্জা আব্বাসের পক্ষে ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছি। এ সময় তারা সময়ক্ষেপণ করে আমাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি।
তিনি বলেন, এ সময় কাগজপত্র রেডি করতে করতে ৫টা বেজে যেতে থাকে। কিন্তু তারা বলেন, সমস্যা নেই আপনাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তারা মির্জা আব্বাসের ছবি দেখে সেই মনোনয়নপত্রটি গ্রহণ করেননি।
খন্দকার সিকদার আরো অভিযোগ করেন, ৫টার দিকে আমাদের প্রথমে বের করে দিয়ে ফের জমা নেয়ার কথা বলে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জমা নেননি।