নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ হ্যাটট্রিক জয়ের মিশনে নেমেছে। দলের মনোনীত প্রার্থী ছাড়া বিদ্রোহীদের দমন করতে হার্ডলাইনে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের পর্যবেক্ষণ করছেন। তারপরও বিদ্রোহী হলে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুমকি কার্যকরে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের নীতিনির্ধারকের ‘আজীবন বহিষ্কার’ হুমকিকেও তোয়াক্কা করছেন না বিদ্রোহীরা।
দলের সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমন করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চার নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপাপ্তরা এরই মধ্যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের চিঠি দিয়েছেন। যেসব আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন তাদের একজনকে ছাড়া বাকিদের চিঠিও দিয়েছেন। তবে তাদের চিঠি কিংবা পরামর্শে কাজ না হলে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের অটল থাকবে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি। শনিবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং দলীয় নেতাদের কার কি করণীয় বুঝিয়ে দেয়া হয়।
সূত্রটি জানায়, ইতিমধ্যে দেশের ৮টি বিভাগে ৯০ জনের বেশি প্রার্থী দলের মনোনয়ন না পেয়ে জানিয়েছেন যে তারা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্ব^তা করতে চান। তারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ কেউ স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সারাদেশে ৭৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে চিহ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলের পক্ষে একই আসনে দু’জনকে চিঠি দেয়া প্রার্থীদের মধ্যে একজন বাদে বাকিজনকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার নির্দেশ যাবে হাইকমান্ডের। এসব প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য দলের পক্ষে পরবর্তী সময়ে কোনো প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস দেয়া হবে না। কেবলমাত্র দলীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রত্যাহার করার জন্য আহ্বান জানানো হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের কথা দিয়েছে বিদ্রোহী হিসেবে থাকবে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিদ্রোহীর সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছি। আমাদের পরামর্শে এরই মধ্যে অনেকেই প্রত্যাহার করেছেন। আমরা সফলতা নিয়ে শতভাগ আশাবাদী, আমাদের কোনো বিদ্রোহী থাকবে না।
দলের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে প্রায় ৭৫টি আসনের বিদ্রোহীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের গুঞ্জন রয়েছে। সেই তালিকাও চিহ্নিত করেছে ক্ষমতাসীন দল। তাদের ব্যাপারে ৮ তারিখের মধ্যেই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবে দল- এমনটাই জানিয়েছেন।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে ২৪৭টি আসনে একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ইসি সূত্র জানায়, সারাদেশে ৩০০ আসনে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছ থেকে মোট ৩ হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী আছেন ১৭টি আসনে। আসনগুলো হলো এগুলো রংপুর-৬; নওগাঁ-৫; নাটোর-১; নড়াইল-১; বরগুনা-১; পটুয়াখালী-২; টাঙ্গাইল-২; জামালপুর-১ ও ৫; কিশোরগঞ্জ-১; ঢাকা-৫, ৭ ও ১৭; চাঁদপুর-১, ২ ও ৪ ও ল²ীপুর-২।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা আগেই ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের নির্দেশ অমান্য করলে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও দলীয় অবস্থান থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বিভিন্ন সভায় বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। তিনি যত বড় প্রভাবশালী হোন না কেন, কোনো ধরনের দয়া দেখানোর সুযোগ নেই। দল করতে হলে সিদ্ধান্ত মানতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে।
এছাড়াও ১৪ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী চার হাজার ২৩ জন নেতা। সে সময় দীর্ঘ সোয়া ঘণ্টার আবেগঘন বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন না করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কঠোর বার্তা দেন তিনি। তবে এবারো দলের বার্তা উপক্ষো করে প্রার্থী হয়েছেন অনেকে। ইতিমধ্যে একাধিক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এতে কোনো সংসদীয় এলাকায় প্রকাশ্য বিরোধ প্রকট হয়ে উঠছে।
রোববার থেকে দলের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংকট নিরসনে কাজ শুরু করার কথা আওয়ামী লীগের। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন গণভবনে গিয়ে দলীয় সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং নির্দেশনা নিয়ে আসেন। সে ধারাবাহিকতার শনিবার ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসলামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। সূত্র: মানবকণ্ঠ