প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাদ্দকৃত বাড়িতে উঠতে পারছেন না যশোরে উদীচীর দ্বাদশ সম্মেলনে বোমা হামলায় নিহত শহীদ নাজমুল হুদা তপনের বৃদ্ধ মা সামুসুন্নাহারসহ পরিবারের সদস্যরা। একমাত্র মাতা গোজার ঠায় হারিয়ে এখন তারা পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাড়ি ফিরে পাবার জন্য ধর্ণা দিচ্ছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু কেউ তাদের আর্তি শুনছে না। পুলিশের অবৈধ কারণ দর্শানো নোটিশের কারণে শহীদ পরিবারের সদস্যরা এখন বাড়ি ছাড়া।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরের টাউন হল ময়দানে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে বোমা হামলায় নাজমুল হুদা তপনসহ ১০ জন নিহত হন। তপন ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উর্পাজন ক্ষম ব্যক্তি। তপন নিহত হওয়া পর তার মা সামছুন নাহার তিন মেয়ে ও বেকার তিন ছেলে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। এই ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরের দিন অথাৎ ৭ মার্চ তৎকালণীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে যশোর আসেন। মন্ত্রী রফিকুল ইসলাম নিহত শহীদ তপনদের শহরের গাড়ি খানার বাড়ি যান। এসময় তপনের বৃদ্ধ মা সামছুন নাহার ও পরিবারের সদস্যরা মন্ত্রীর কাছে তাদের আর্জি মাথা গোজার জন্য আবাসনের দাবি জানান। মন্ত্রী রফিকুল ইসলাম বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন। বিষয়টি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বের সাথে নেন। প্রাধানমন্ত্রীর তৎকালীন একান্ত সচিব র.আ.ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরি প্রধান মন্ত্রীর অবহিতিতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহকে আবেদন কারি নামে গাড়ি খানার প্লট নং ৯৫। ৩৯৫/৭৩ নং (পরিমান ৫ শতক) সরকারি পরিত্যক্ত বাড়িটি বরাদ্দের জন্য নির্দেশ দেন। নিহত তপনের মা সামছুন নাহারের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সভায় ৩৯৫/৭৩ নং বাড়িটি ১লাখ ২৯ হাজার ৬ টাকা মূল্যে বিক্রয়ের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ও বাড়িতে বসবাসরত সামছুন নাহারের নিকট বিক্রয় প্রস্তাব দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করা হয়। ওই সভায় যশোরের পুলিশ সুপারের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে তপনের মা সামছুন নাহার বাড়ির মূল্যের প্রথম কিস্তির ২৫ হাজার টাকা জমা দেন। এরপর জামাত-বিএনপির সরকার ক্ষমতায় এসে কিস্তির টাকা নেয়া বন্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে চক্র বৃদ্ধি হারে ৫২ হাজার টাকা সুদ হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার পর সুদসহ বাকি সমুদয় টাকা সামছুন নাহার পরিশোধ করে বাড়ির দলিল করে নেন। এভাবে বসবাস করতে থাকার পর পিডাব্লিউডি ২০০০ সালে বাড়িটি কনডেম ঘোষনা করে। আর্থিক অনাটনের কারণে সামছুন নাহার বাড়িটি মেরামত করতে না পেরে জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। আত্মীয় স্বজন শুভানুধ্যায়িদের সহোযোগিতায় মেরামতের জন্য ২০১৮ সালে বাড়ি ছেড়ে যখন ভাড়া বাড়ি উঠেন ঠিক ওই সময় যশোরের তৎকালিন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর সামছুন নাহারে দুই ছেলে নিহত তপনের ভাই খসরুজ্জামান ও পারভেজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। নোটিশে তিনি বলেছেন, ৯৫ নং দাগে কোন স্থাপনা ছিল না। সেখানে ফলজ গাছপালাসহ শাকসজ্বি আবাদ করা হতো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ৯৫ নং দাগের জমিতে নিহত তপনদের জেনারেটর ঘর ও তাদের লাগানো গাছগাছালি ও সীমানা দেয়া রয়েছে।
নিহত তপনের বোন নাজমুন সুলতানা বিউটি ও নাদিয়া সুলতানা লিপি বলেন, ৫ মার্চ মঙ্গলবার পুলিশের অবৈধ কারণ দর্শানো নোটিশের শুনানি ও জবাবের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনজীবি অসুস্থ থাকায় আদালতে সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, তপনের মা সামছুন নাহার কি শেখ হাসিনার দেয়া বাড়িটিকি আর ফেরত পাবে না। তপনের পিতা মৃত রজব আলী ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর। একজন মুক্তিযোদ্ধার অসহায় পরিবারকি এভাবেই পথে পথে ঘুরে বেড়াবে।