শ্রীলঙ্কায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

শ্রীলঙ্কায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় বাড়তি নিরাপত্তা এবং নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে মনিটরিং।

রবিবার (২১ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কায় তিনটি চার্চ ও তিনটি হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৬০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে গির্জাগুলোর চারপাশে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও কোনও ধরনের হুমকি নেই।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার ঘটনার কোনও রেশ আমাদের দেশে থাকবে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি না। তারপরেও আমরা কোনও কিছুকে কম গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি না। যেহেতু এরকম একটি ঘটনা আমাদের নিকটবর্তী একটি দেশে ঘটেছে, বিষয়টি আমরা অবশ্যই বিবেচনায় রেখেছি। ধর্মীয় যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেগুলোতে আমাদের বাড়তি নিরাপত্তা এবং নজরদারি থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা কথা নিশ্চিত করতে চাই যে, শ্রীলঙ্কার মতো কোনও ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আমাদের দেশে খুবই কম। যারা এসব কাজ করতে পারে তাদের সক্ষমতা নেই বললেই চলে।’

রবিবার রাজধানীর চার্চগুলো ঘিরে দেখা গেছে, সকাল থেকে খ্রিষ্টান ধর্মাবল্বীরা চার্চগুলোতে এসে প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন। কাকরাইলের সেন্ট মেরীস ক্যাথেড্রাল চার্চে রবিবার সকাল ৭টায় ছিল পুনরুত্থান পাস্কাপর্ব। শেষ হয় বেলা ১০টার পর। একইচিত্র ছিল তেজগাঁওয়ের জপমালা রানীর গির্জায়। সকাল থেকে খ্রীষ্টভক্তরা ইস্টার সানডেতে খ্রীষ্টযোগে অংশ নেন।

কাকরাইলের সেন্ট মেরীস ক্যাথেড্রাল চার্চে সকালে পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি থাকলেও দুপুরে ছিল না। বাইরে ফটকে পুলিশ সদস্যদের কাউকে দেখা যায়নি।তবে ভিতরে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

জপমালা রাণীর গির্জাকাকরাইলের তুলনায় তেজগাঁওয়ের জপমালা রানীর গির্জায় পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল বেশি। তেজগাঁও থানার এস আই মাকারিয়াস দাসের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। মাকারিয়াস দাস বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিন ধরেই এখানে দায়িত্ব পালন করছি। তবে শ্রীলঙ্কার ঘটনার পর আমরা আরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’

কাকরাইলের সেন্ট মেরীস ক্যাথেড্রাল চার্চের সেক্রেটারী ফেবিয়ান এস. গোমেজ বলেন, ‘কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলা হয়েছে, আজ শ্রীলঙ্কায় গির্জায় হামলা হয়েছে। এই হামলাকারীদের কোনও ধর্মীয় পরিচয় নেই। আমি মনে করি, শুধু গির্জায় নয় আমাদের দেশের সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার। আমাদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সজাগ থাকতে হবে, যাতে কেউ আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে।’

এদিকে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা বিষ্ফোরণের পর গুলশান কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। কোনও ধরনের হুমকি না থাকলেও নিকটবর্তী দেশ বা বিশ্বের কোথাও বোমা হামলার মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম হলে গুলশান কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয় বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কূটনৈতিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ ধরনের যেকোনো ইন্সিডেন্ট ঘটলে আমরা সাধারণত নিরাপত্তা টপ পজিশনে রাখি। শ্রীলঙ্কায় বিষ্ফোরণের পর প্রতিটি পয়েন্টে সিকিউরিটি বাড়ানো হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকায় কোনও ধরনের হুমকি নেই। তবে নিকটবর্তী দেশ বা বিশ্বের কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা স্বপ্রণোদিত হয়েই সিকিউরিটি মনিটরিং বাড়াই। এবারও তাই হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, রবিবার শ্রীলঙ্কার ইস্টার সানডের অনুষ্ঠান পালনের সময় চার্চ ও হোটেলের ছয়টিরও বেশি স্থানে সিরিজ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত হামলায় অন্তত পর্যটকসহ ১৬০ জন নিহত এবং সাড়ে ৪০০ বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডের দিনে এই হামলার দায় এখনও কেউ স্বীকার করেনি।