রাবিতে দাঁড়িয়ে খেলা শেষ করলো যবিপ্রবি!

রাবি প্রতিনিধি: আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (যবিপ্রবি) হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ফুটবল দল। শনিবার বিকেল ৪টায় রাবির শেখ কামাল স্টেডিয়ামে এই খেলা ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।

তবে ফাইনাল ম্যাচে ‘খেলার নামে তামাশা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খেলা দেখতে আসা দর্শকেরা। শেষে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা কোনরকম দায়সারাভাবে মাঠে উপস্থিত ছিলেন তারা। শেষ বাঁশি বাজার আগে ৪-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।

খেলা শুরুর দেড় মিনিটেই শাহীনের গোলে এগিয়ে যায় যবিপ্রবি। তবে খেলার ৭ মিনিটেই রাবি ফুটবল দলের খেলোয়ার শান্ত’র দুর্দান্ত ফ্রি কিকে সমতায় আনে রাবি। পরে ১০মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দিয়ে রাবি ফুটবল দলকে এগিয়ে নিয়ে যায় আলফ্রেড। এরপর ৪৭ মিনিটে নোমান ও ৫৫ মিনিটে সুমেত প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে ব্যবধান বাড়ান রাবি দলের খেলোয়াড়রা। শেষ পর্যন্ত ৪-১ ব্যবধানে বিশাল জয় এনে দেয় রাবি ফুটবল দলের খেলোয়ার নোমান ও সুমেত।

তবে খেলার দ্বিতীয় ভাগে প্রথম গোল হওয়ার পরই খেলার শেষের দিকে এক গোল হওয়ার পর বাধে বিপত্তি। নিরাপত্তা সংকটের কারণ উল্লেখ করে হঠাৎ মাঠ ছেড়ে চলে যায় যবিপ্রবির খেলোয়াড়েরা। এসময় তারা রেফারীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। মিনিট দশেক পর আবার তারা মাঠে ফিরলেও খেলায় মনোযোগী হননি। চতুর্থ গোল করার সময় কোনো প্রকার খেলোয়াড়ি মনোভাব ছিলো না আমন্ত্রিত দলের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে অন্যান্য নেতাকর্মীরা যবিপ্রবির গোল বারের পিছনে অবস্থান নেয়। তৃতীয় গোল হওয়ার সময় তারা উল্লাসে মাঠে চলে আসে। যার ফলেই নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে আমন্ত্রিত দল মাঠ ছেড়ে উঠে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম বলেন, ‘মাঠে দর্শকরা প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। তারপর যাবিপ্রবির খেলোয়াড়েরা বিরতির পর মাঠ ছেড়ে চলে আসে। পরে আবার প্রক্টরের আলোচনার পর মাঠে ফিরে। কিন্তু তারা খেলা দেখায় নি, তামাশা দেখিয়েছে দর্শকদের।

স্কোরবোর্ডের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, হাজারো দর্শক মাঠে খেলা দেখতে এসেছে, তামাশা নয়। যবিপ্রবির খেলোয়াড়েরা আমাদেরকে তামাশা দেখিয়েছে। তারা খেলতে এসে মাঠে শুধু দাঁড়িয়ে থেকেছে। যা কখনোই খেলার মাঠে কাম্য নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো বলেন, মাঠের গ্যালারি থেকে যবিপ্রবি গোলকিপারকে ইটপাটকেল ও মারবেল নিক্ষেপ করছিল রাবির দর্শকরা। প্রশাসন ও শিক্ষকদের সামনে স্টেডিয়ামের ভিতরে প্রবেশকৃত কিছু যুবক যবিপ্রবির খেলোয়ারদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এছাড়াও রেফারির পক্ষপাত মূলক আচরণ ও লক্ষ্য করা যায়। যার জের ধরে ম্যাচ শেষের ১০মিনিট পূর্বে যাবিপ্রবি মাঠ থেকে উঠে যায়। গ্যালারিতে পর্যাপ্ত বসার জায়গা থাকলেও নিরাপত্তা বেষ্টনী ছেদ করে তিনশ চারশ এর মতো দর্শক মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং বিভিন্নভাবে যবিপ্রবি খেলোয়ারদের হয়রানি করেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠের ভেতর থেকে দর্শকদের বের করে দিলে স্বাভাবিকভাবে আবার খেলা শুরু হয়। তবে আর খেলায় মনযোগী হননি যবিপ্রবির খেলোয়াড়রা। অনেকটা দায়সাড়াভাবে মাঠে দৌড়ানোর পরিবর্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থেকে খেলা শেষ করেন তারা।

অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর লুফর বলেন, যবিপ্রবির ম্যানেজার লেফারির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তবে মাঠে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। শান্ত পরিবেশে খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে সকালে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩-১ গোলে পরাজিত করে হাজী মোহম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ এবং তৃতীয় স্থান দখলকারী দলকে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। খেলায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন রাবি ফুটবল দলের শান্ত এবং ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন যবিপ্রবি ফুটবল দলের খেলোয়াড় পুষ্পক বৈরাগী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাবি উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, গত ২০ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০১৯ শুরু হয়। এই প্রতিযোগিতায় ঢাবি, রাবি, চবি, ইবি, বুয়েট, রুয়েট, শাবিপ্রবিসহ দেশের মোট ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে।