খালেদার মুক্তিতে রাজপথের কর্মসূচি চান নেতাকর্মীরা

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত কারান্তরীণ দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য রাজপথের কর্মসূচি চান বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলনেত্রীর মুক্তির দাবিতে অবিলম্বে জোরালো কর্মসূচি দিতে তারা দলের হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রবিবার বিকালে ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখা প্রায় সব নেতার কণ্ঠেই এসেছে এমন আহ্বান। বিশেষ করে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অবিলম্বে কর্মসূচি দেয়ার জন্য হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানান।

তারা বলেছেন, প্রায় দুইবছর ধরে কারাবন্দি দলপ্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আর আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে রাজপথেই ফয়সালা করতে হবে। আগের মােতই তাদের অভিযোগ, সরকার আদালতকে অন্যায়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে খালেদা জিয়ার জামিনকে বিলম্বিত করছে। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদাকে মুক্ত করতে হবে।

যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তার মুক্তির জন্য রাজপথে রক্ত দিতে আমরা প্রস্তুত। নেতাদের বলবো আপনারা কর্মসূচি দিন।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল বলেন, ‘নেতৃবৃন্দকে বলবো আপনারা কর্মসূচি দিন। প্রয়োজনে ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গা দখল করে আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।’

আর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নেত্রীর মুক্তির জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করুন। আমরা বাস্তবায়ন করবো।’

বেলা দুইটায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী ট্রাকের তৈরি মঞ্চে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতারা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ছিল পুরো এলাকায়। দুপুর থেকেই থানা ও ওয়ার্ডসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যানার ও ফেস্টুনসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। বেলা দুইটা নাগাদ লোক সমাগমের পরিপূর্ণতা পায়। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের অবস্থানের ফলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পচন ধরেছে। তাই শেখ হাসিনা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দেবে না। তাই আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তাহলেই চেয়ারপারসন মুক্তি পাবেন।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবিলম্বে সরকারকে নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করার জন্য লড়াই করেছি। স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য আমরা আবারো বুকের তাজা রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’

সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘সকালে আমাদের অনুমতির কথা জানানো হয়। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, সামনের দিনে সমাবেশ করতে আমরা আর অনুমতি নেব না। আমাদের যখন প্রয়োজন হবে তখনই সমাবেশ করবো। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার।’

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখন থেকে সমাবেশ করতে বাধা দিলে লড়াই বাঁধবে। এবং সে লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের জিততে হবে। সামনের দিনে সমাবেশ করতে আর অনুমতি নেব না। আমাদের সবাইকে সে বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু এখন বিকল্প হলো রাজপথের আন্দোলন। শিগগিরই কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।’

সমাবেশে বারংবার স্লোগান দেয়াতে বিরক্তি প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই স্লোগান শুধু সমাবেশ বা মিটিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু রাজপথে না নামলে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। আমরা যেদিন নামতে পারবো সেদিন তার আর মুক্তি চাইতে হবে না। আসুন সেই প্রস্তুতি নেই।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অভিযোগ, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে নির্বাচন হয় না বহুদিন। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এসব সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথ বেছে নিতে হবে। রাজপথ দখলে নিতে হবে। তাহলেই তার মুক্তি হবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আজকে যে যে পর্যায়ে এসেছি তার জন্য অবদান জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার। তাই তাদের প্রতি ঋণ শোধ করতে হলে আমাদের শপথ নিতে হবে জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনে রাজপথে থাকবো।’ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার।