শ্রিংলার মিশন হবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনঃনির্মাণ : হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং নাগরিকপঞ্জির মতো ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে আঘাত লেগেছে। আগামী মাসে ভারতের পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এ দায়িত্ব নেয়ার পর তার প্রথম কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে ভারত-বাংলাদেশের সেই সম্পর্ককে পুনঃনির্মাণ করা। এ বিষয়ে অবহিত এমন ব্যক্তিরা এ প্রত্যাশা করছেন। ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে। তিনি ২৯শে জানুয়ারি অবসরে যাচ্ছেন। এরপর ওই দায়িত্ব নেবেন শ্রিংলা। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে তার চমৎকার সম্পর্কের কারণে দ্বিপক্ষীয় এই সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে শ্রিংলাকে বাছাই করা একটি ভাল কাজ- যারা এ বিষয়টি জানেন তারাই এমনটা বলেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালন করা হবে আগামী বছর। এটা হবে বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠান। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত ১৬ই ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের বিদায়ী হাই কমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন মোদি। বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ইস্যু করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদি সেদিন বলেছেন ‘ আমি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছি’।

এ বিষয়ে অবহিত এমন ব্যক্তিরা বলেছেন, শ্রিংলার সফরের পরে মোদির সফর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক ছবির পরিচালক শ্যাম বেনেগালের ছবি সহ শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজনে দুই দেশ যৌথভাবে কি কি প্রকল্পে কাজ করতে পারে শ্রিংলার সফরে সে বিষয়ে নজর দেয়া হবে।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিজেপির একটি অংশের নেতারা বাংলাদেশকে উল্লেখ করে বার বার বক্তব্য দিয়েছেন। তারা এমন মন্তব্য করেছেন যে, এসব প্রক্রিয়ায় যেসব অবৈধ অভিবাসীকে সনাক্ত করা হবে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। এমন ঘটনায় বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ভারতের পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত ১২ই ডিসেম্বর পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেন। এর এক সপ্তাহ পরে দ্বিপক্ষীয় যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক বাতিল করে ঢাকা। বিষয়গুলোতে অবহিত ওইসব ব্যক্তি বলেছেন, এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জি এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে ঘিরে বাংলাদেশ অসন্তুষ্ট বলেই দেখা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ করতে চান না এমন একজন বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে খুবই চমৎকার সম্পর্ক আছে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার। তিনিই ঢাকার উদ্বেগের বিষয়ে অনেকটা সমাধান করতে পারবেন। ঢাকায় তার সফলতার কারণে তাকে বাংলাদেশের একজন বন্ধু হিসেবে দেখা হয়।

মোদি ও হাসিনা উভয়েই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বর্তমান অবস্থাকে বর্ণনা করেছেন একটি ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে। কিন্তু বাংলাদেশি কর্মকর্তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছেন যে, নাগরিকপঞ্জি এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের মতো ইস্যুগুলো এই সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে গত কয়েকটি মাস এই ক্ষতি হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের উল্লেখ করে বাংলাদেশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিবেশিদের মধ্যে বাংলাদেশ হলো ভারতের সবচেয়ে উত্তম বন্ধু। অনুপ্রবেশকারীদের পুশব্যাক করা নিয়ে বক্তব্য এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো একই কাতারে ফেলায় জনগণের মধ্যে ভীষণ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন করা হয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মুসলিম বাদে সব সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য।

ভারত বার বার বলেছে, আসামে নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি হলো ভারতের ‘আভ্যন্তরীণ বিষয়’। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে পরিষ্কার করেছেন যে, প্রয়াত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করেছেন। নয়া দিল্লি আরো ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, সারাদেশে নাগরিকপঞ্জি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও (বাংলাদেশে) এসব উদ্বেগ রয়েই গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছেন ২০০৯ সালে। তখন থেকেই তিনি ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। তিস্তার পানি বন্টন ঢাকার জন্য একটি কৌশলগত ইস্যু। এই চুক্তিতে অগ্রগতির অভাব সত্ত্বেও সীমান্ত ও নৌসীমানা বিষয়ক ইস্যুর সমস্যা সমাধানে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হয়েছে।