যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ক্ষেত্রপালা গ্রামের বাসিন্দা খালেদুর রহমান কচি (৪০)। একজন স্বল্প আয়ের মানুষ। সারাবিশ্ব যখন প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ঠিক তখনই কচি স্বল্প পরিসরে সে যুদ্ধের একজন সৈনিক হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন। নিজের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার মধ্যেও দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে মানুষের জন্য কিছু একটা করতে নীরবে নিভৃতে কাজ করে চলেছেন। তার এই কর্মকান্ডে খুশি গ্রামের মানুষ।
বুধবার (২৫মার্চ) শুরুর দিকে আসা যাক। স্থানীয় বাজার থেকে খালেদুর রহমান কচি কিছু ইলাস্টিক, কয়েকটি টিস্যু (শপিং) ব্যাগ আর সুতা কেনেন। বাড়িতে এসে টিস্যুব্যাগগুলো গরম পানি, স্যাভলন ও ডিটারজেন্টে ভিজিয়ে জীবানুমুক্ত করেন। প্রথম দু’একদিন ৩০ থেকে ৪০টি মাস্ক তৈরি গ্রামের বয়োবৃদ্ধদের নিজহাতে সেগুলো পরিয়ে দেন। এরপর তাকে আর বাজারে যাওয়া লাগেনি। গ্রামবাসীরাই টিস্যুব্যাগ কিনে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানায়, কচি যশোর থেকে বিভিন্ন মুদি ও স্টেশনারী মালামাল কিনে সেগুলো নারিকেলবাড়িয়া ও পাশের মাগুরা জেলার শালিখা বাজারের দোকানে দোকানে সরবরাহ করেন। তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক প্রয়াত আব্দুস সালাম। একাত্তরে যশোহর থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক মাতৃভূমি’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটিতে তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা ও মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ ছাপা হয়। তবে কচি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ে আজও নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেনি।
আমিনুর রহমান নামে প্রতিবেশী একজন কৃষক বলেন, কচি আমাকে একটা মাস্ক দিয়েছে। তবে মাস্কের ব্যবহার আমরা জানতাম না। সেই এখন আমাদের বুঝিয়ে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছে।
ক্ষেত্রপালা গ্রামের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্থানীয় দরিদ্রদের মাস্ক তৈরি করে পরিয়ে দিচ্ছে কচি। এটি খুবই ভাল একটি কাজ।
নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকায় কচিকে সবাই চেনে। তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিক ছিলেন। সকলে তাকে পছন্দ করতেন। কচি সাধারণ মানুষের উপকার করছেন। তাকে এ কাজে আমরা মুগ্ধ।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের আবুল সরদার বলেন, আমার বাড়িও একই গ্রামে। কচি খুব ভাল ছেলে। সে গরিব মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। করোনা প্রতিরোধে আমাদের সকলকেই তার মতো এগিয়ে আসা উচিৎ।