যশোরে কলেজছাত্র নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি, সেই ৪ পুলিশ সদস্য ক্লোজড

যশোরে কলেজছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের সেই চার পুলিশ সদস্যকে প্রশাসনিক কারণে ক্লোজড করা হয়েছে। রোববার এক অফিস আদেশে তাদেরকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

তারা হলেন- ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মুন্সি আনিচুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুমারেশ কুমার সাহা, এএসআই সাজদার রহমান ও কনস্টেবল ফারুক হোসেন।

এসপি বলছেন, তদন্তে নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি। তবে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করা করে কর্মস্থল ত্যাগ ও সাদা পোশাকে অভিযান পরিচলানা করায় তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আহত ইমরানের অভিযোগ ছিল, গত ৩ জুন সন্ধ্যায় তিনি সলুয়া বাজার এলাকা থেকে এক সঙ্গীসহ বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সাজিয়ালি ফাঁড়ির পুলিশ তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে। এ সময় ভয়ে ইমরান দৌঁড় দিলে পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে বেধড়ক মারপিট করে। পরে ইমরান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটি ফার্মেসিতে নিজেকে দেখতে পান তিনি। এ সময় পুলিশ পকেটে গাঁজা দিয়ে তার বাবার কাছে ফোন করে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ছয় হাজার টাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর বেসরকারি কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান তার দুটি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত ৮ জুন বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় হয়। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানি শেখের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সোমবার (১৫জুন) তদন্ত কমিটি পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত কমিটি ইমরানকে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা পায়নি।

এ প্রসঙ্গে সোমবার বিকেলে যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আজ তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে কলেজছাত্র ইমরানকে নির্যাতনের সত্যতা মেলেনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছে ইমরানকে নির্যাতন করলে কিডনি হ্যামারেজ কিংবা ডেমারেজ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। আগে থেকেই তার কিডনির সমস্যা ছিল। এছাড়া তার শরীরে কোথায়ও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

পুলিশ সুপার বলেন, ইমরান পুলিশের তল্লাশি দেখে দৌঁড়ে পালায়। এক কিলোমিটার দূরে পড়ে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। ওই সময় চিকিৎসক তার শরীরে উচ্চ মাত্রার ব্যাথানাশক ইনজেকশন দেয়। তার প্রভাব পড়তে পারে কিডনিতে। ইমরান গাঁজা সেবনকারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। নির্যাতনের পর টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার সত্যতা মেলেনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, প্রশাসনিক কারণে চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। এরমধ্যে ক্যাম্প ইনচার্জ আনিচুর রহমান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। বাকী তিন সদস্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে অভিযান পরিচালনা করেছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।