ফের যশোর শিক্ষা বোর্ডে ১৬ লাখ টাকার জালিয়াতির ঘটনা

যশোর শিক্ষা বোর্ডে আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনার বিষয়টি শেষ না হতেই আবার ঘটলো ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ১০ টাকা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।

এবিষয়ে তথ্য দুদকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলি আর রেজা। তবে কোন কোম্পানীর নামে এ চেক জালিয়াতি করা হয়েছে সেটা জানাতে রাজি হয়নি হিসাব শাখা।

তারা জানান আজ বুধবার কোম্পানীর নাম জানা যাবে। গত বৃহস্পতিবার ৭ অক্টোবর বোর্ডের একাউন্ট থেকে ১০ হাজার ৩৬ টাকার ভ্যাট ও আয়করের চেক জালিয়াতি করে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়। এ টাকা উত্তোলন করে ভেনাস প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং এবং শাহী লাল স্টোর দুটি প্রতিষ্ঠান।

দুদক চেক জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত শুরু করলেই অজ্ঞাত স্থান থেকে চিরকুট লিখে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার ফেরত দেয় পলাতক হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম। এমনকি সোমবার ১১ অক্টোবর বোর্ডের হিসাব সহকারী সালাম দুদকে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছে একটি বিশেষ সূত্র।

তারপরও বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে আব্দুস সালামের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। প্রচার রয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ সালামের সন্ধান জানার পরও বলতে চাচ্ছে না। জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।

এদিকে আড়াই কোটি টাকা চেক জালিয়াতির পরিস্থিতি শান্ত না হতেই মঙ্গলবার ১২ অক্টোবর আবারো ধরা পড়েছে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ১০ টাকার জালিয়াতি। বোর্ডের হিসাব শাখার উপপরিচালক এমদাদুল হক জানান মঙ্গলবার ১২ অক্টোবর বোর্ডের হিসাব যাচাই করার সময় একটি চেকের মুড়ি বইয়ে এই অসংঙ্গতি ধরা পড়ে।

বিষয়টি বোর্ডের সচিব স্যারকে জানানো হয়েছে। বোর্ডের সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলি আর রেজার জানান, আরেকটি জালিয়াতির ঘটনা যাচাই বাছাই করে দুদকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়টি তদন্ত করবে।

কোন অবস্থাতেই তিনি কোন কোম্পানীর নামে ও কত টাকার বিপরীতে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ১০ টাকার চেক জালিয়াতি হয়েছে সেটা বলতে রাজি হননি। উল্টো বলেন এবিষয়টি বলবেন চেয়ারম্যান স্যার।

সূত্রে জানা যায়, এ বিষয় নিয়ে সচিবের কক্ষে হিসাব শাখার উপপরিচালক এমদাদুল হক, অডিট অফিসার আব্দুস সালাম আজাদ, সহকারী সচিব কমন আশরাফুল ইসলাম গোপন আলোচনা করেছেন বেশ কিছু সময়। তারা কেউ এবিষয়ে কোন কিছু বলতে রাজি হননি।

অন্যদিকে চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন জানান, আমি ঢাকাতে মিটিংয়ে এসেছি, আমি এখান থেকে ঘটনা শুনেছি। আমি কি করে বলবো, বলবে সচিব।

তবে আমি হিসাব শাখায় নির্দেশ দিয়েছি সব জালিয়াতির ঘটনা খুঁজে বের করতে। জালিয়াতির ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হবে। কোন অবস্থাতেই কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার অর্থবছর শেষে একাউন্ট যাচাইবাছাই করলে টাকা উত্তোলনের ঘটনা বেরিয়ে আসে। অর্থ জালিয়াতির ঘটনা দিন থেকেই পলাতক রয়েছেন হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম।

অনেক খোজখুজি করেও তার সন্ধান বের করতে পারেনি বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পওয়া যাচ্ছে বলে জানান বোর্ডের সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলি আর রেজা। যদি তিনি যদি অনেক দিন অফিসে অনুপস্থিত থাকেন,তাহলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে সোমবার ৭ অক্টোবর অফিসে চেকজালিয়াতির বিষয়ে সভা করেছে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর খুলনার উপপরিচালক এএসএম আব্দুল খালেক সহ খলনা,বাগের হাট সরকারি সরকুলের প্রধান শিক্ষক,

যশোর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সহ সাতজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আলোচনা হয় কিভাবে টাকা আদায় হবে সে চেষ্টা করতে হবে। তদন্ত কমিটি তদন্তের স্বার্থে সেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে বিশেষ সূত্র জানিয়েছে।

এঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে বোর্ডের পক্ষ থেকে রোবাবর ৬ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ দিলে তারা চেক জালিয়াতির ঘটনার তদন্ত করে। সকালে তারা অফিসের এসংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে।

বিকেল ব্যাংকে গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট ঢাকার অফিসে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালন নাজমুচ্ছায়াদাত। তিনি জানান ঢাকার হেড অফিসের সিদ্ধান্ত আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তার আগে কিছুই বলা যাবে না।

তবে যেদিন দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছে, সেদিনই আব্দুস সালাম চিরকুটে সব দোষ নিজের ঘাড়ে নেয়ায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে অফিসরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে। কি কারনে সালাম আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে, কাকে সে বাঁচাতে চাচ্ছে ?