সেই সময় সবাই কেন থমকে গেলো, জবাব পাইনি: প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সবাই কেন থমকে গেলো? সে প্রশ্নের জবাব এখনো খুঁজে পাননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বুধবার ৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, যে জাতি এক নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে দেশ স্বাধীন করেছে আর সেই নেতাকে যখন নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হলো, তখন সবাই কেন থমকে গেলো?

সে একটা বিরাট প্রশ্ন। সে প্রশ্নের জবাব এখনো খুঁজে পাইনি। তবে হয়তো পাবো।  দলের তৃণমূল কখনো ভুল করে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি অনেককে দেখেছি হয়তো কিছু সময়ের জন্য বিভ্রান্ত হন। কিন্তু দলের তৃণমূলের নেতারা কখনও ভুল করে না।

হয়তো কেউ ক্ষমতার লোভে পড়ে যান। বারবার আঘাত এসেছে, পার্টিও ভেঙেছে, আবার দলকে গড়তে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দেশ তিনি (বঙ্গবন্ধু) দিয়ে গেছেন আমাদের। আদর্শ দিয়ে গেছেন, যে আদর্শ নিয়ে একটি জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেট শুধু জাতির পিতাকেই কেড়ে নেয়নি, স্বাধীনতার চেতনা এবং আদর্শকেও বুলেট বিদ্ধ করেছিল, ধ্বংস করে দিয়েছিল। স্বাধীনতার ৯ মাসের মধ্যে তিনি আমাদের একটা সংবিধান দেন, সেই সংবিধানকেও ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে, স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতি ঠেকাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে।

জাতির পিতা বলেছিলেন ডেভিড ফ্রস্টের ইন্টারভিউতে, সেখানে তিনি বলেছিলেন—তার সবচেয়ে বড় শক্তি এদেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা। আর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তিনি অধিক ভালোবাসেন।

সত্যিই তিনি অতিরিক্ত ভালোবাসতেন এদেশের মানুষকে। সেজন্যই তো অকালে জীবনটা দিতে হলো। অনেক ভালোবাসা আর বিশ্বাস যাদের করেছিলেন তারাই তার বুকে গুলি চালালো, এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্যের বিষয়।

এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বুলেট-বোমা অনেক কিছুই তো মোকাবিলা করেছি, কাজেই এ নিয়ে চিন্তা করি না।

দেশটাকে যেখানে নিয়ে এলাম, এই গতিটা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই চাই। চিন্তাটা সেখানেই আবার যেন আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সকলকেই এ ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

আবার যেন হায়েনার দল এসে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।

একটি মহল দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা তো দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না। কাজেই তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে। কিন্তু নীতি আদর্শ নিয়ে চললে আর সৎ পথে চললে পরে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। সেটা প্রমাণ করেছি আমরা।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু মানুষ সবসময়, সেই দেশ সৃষ্টির পর থেকে কোনো একটা প্রভু খুঁজে নিয়ে তাদের পদলেহন করতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কোনো আত্মমর্যাদাবোধ নাই, তাদের নিজের প্রতি কোনো আত্মবিশ্বাস নাই। এদের দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণ হয় না।

কৃষিবিদ মিলনায়তন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।