ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এতে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষকরা বলছেন, এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি একেবারে কম হওয়ায় সেচের ব্যয় বেড়েছে।
এরপর রয়েছে-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট। এ অবস্থায় সারের দাম বাড়ানোয় তারা চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন। সবকিছু মিলে কৃষি খাতে উৎপাদনের খরচ বাড়বে। এরফলে কৃষকদের একটি অংশ জমির আবাদ কমানোর কথা বলছেন। অর্থনীতিবিদ ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী মৌসুমে চালসহ কৃষিপণ্য এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প পণ্যের দাম বাড়বে।
তবে কেউ কেউ বলছেন, উৎপাদন খরচ কিছুটা বাড়লেও খুব বেশি আশঙ্কার কারণ নেই। অবশ্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দাম কিছুটা বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহারের প্রবণতা কমবে। অপরদিকে দাম ভালো পেলে কৃষকরা তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
সোমবার থেকে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এরফলে কৃষককে প্রতি কেজি সার ১৬ টাকার পরিবর্তে কিনতে হবে ২২ টাকায়। শতকরা হিসাবে এই বৃদ্ধি প্রায় ৩৮ শতাংশ। আর একজন ডিলার পর্যায়ের দাম ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। দাম বাড়ানোর কারণ হিসাবে সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এছাড়াও ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে এ সিদ্ধান্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এক্ষেত্রে ভর্তুকি কমাতে আইএমএফের চাপ রয়েছে। সারের দাম বাড়ানোর জন্য এটিও একটি কারণ।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে কৃষি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এছাড়াও দাম বাড়বে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প পণ্যের। সামগ্রিকভাবে যা মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে।
অর্থাৎ এমনিতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সেটি আরও বাড়বে’। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সারের দাম বেড়েছে। এক্ষেত্রে দেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকারের কাছে বিকল্প ছিল ভর্তুকি বাড়ানো। বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতির যে অবস্থা সেখানে ভর্তুকি বাড়ানো কঠিন।’
এদিকে কৃষকরা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কিনা-তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বেশি সমস্যায় আছেন বর্গাচাষিরা। তারা বলছেন, সারের দাম বৃদ্ধি এবং অনাবৃষ্টিসহ শ্রমিক ব্যয় ও আনুষঙ্গিক যে ব্যয় হবে, তাতে চলতি মৌসুমে আমন চাষে নির্ঘাৎ লোকসান হবে। এর সঙ্গে তাদের নিজেদের শ্রমের মূল্য যুক্ত করলে লোকসানের পাল্লা আরও ভারি হবে। যে সব জেলায় বেশি ধান উৎপাদন হয়, তার মধ্যে দিনাজপুর অন্যতম। কিন্তু সারের দাম বাড়ানোয় দুশ্চিন্তার কথা বলছেন জেলার কৃষকরা। তাদের মতে, এক একর জমিতে এবার আমন আবাদ করতে খরচ বাড়বে ৫শ টাকা এবং বোরো আরও বেশি।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উত্তর মহেষপুর গ্রামের কৃষক সলিল বসাক জানান, প্রতি একর জমিতে আমন আবাদ করতে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয় ৮০ থেকে ৯০ কেজি, টিএসপি সার লাগে ৪০ কেজি, পটাশ ৪০ কেজি, জিংক ৪ কেজি এবং সালফারের প্রয়োজন হয় ২ কেজি। আর কীটনাশক প্রয়োগ করতে খরচ হয় ৪২শ টাকা থেকে ৪৩শ টাকা। জমিতে হালচাষ, ধান রোপণ থেকে কর্তন পর্যন্ত সারসহ সব মিলিয়ে প্রতি একর জমিতে আমন আবাদ করতে খরচ হতো ৩৪ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। আর আমন আবাদ হয় প্রতি একরে ৪০ থেকে ৪৫ মন। ধান বিক্রি করে অধিকাংশ টাকাই চলে যায় এই উৎপাদন খরচে। কিন্তু হঠাৎ ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধিতে প্রতি একর জমিতে বাড়তি খরচ গুনতে হয় ৫শ থেকে ৬শ টাকা। তাই ধানের দাম ভালো না পেলে লোকসান গুনতে হবে তাদের।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘কৃষকরা বরাবরই মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করে থাকেন। এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা করা হলেও কাজ হয় না’। তিনি দাবি করেন, ‘দাম কিছুটা বৃদ্ধির মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সারের ব্যবহারের প্রবণতা কমবে। এতে জমির উর্বরা শক্তিও ঠিক থাকবে।’ খালেদুর রহমান আরও জানান, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২ আগস্ট পর্যন্ত ৬০ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর মহল্লার ধানচাষি আসাদুজাম্মান মিঠু জানান, ‘তিনি এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। চারা রোপণ করতেই ১৪ হাজার টাকা খরচ। এর মধ্যে অনাবৃষ্টির কারণে তাকে সেচ বাবদ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর