ব্যাংক কর্মকর্তা সেজে কার্ডের তথ্য জেনে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তারা

বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কার্ড ডিভিশনের কর্মী সেজে ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্যবহারকারীদের ফোন করে তথ্য নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। সেই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা জানান, নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি, কার্ডের পাসওয়ার্ড চার ডিজিটের বদলে ছয় ডিজিট করতে হবে, ই-মেইলে পাঠানো মেসেজ হালনাগাদ করা হয়নি। এসব কারণে কার্ডের সেবা বন্ধ করা হয়েছে। এতে গ্রাহকরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। এই সুযোগে তারা কার্ডের নম্বর, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, সিকিউরিটি পিন সংগ্রহ করে নেন। পরে গ্রাহককে বোকা বানিয়ে ফোনে পাঠানো ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপিও জেনে নেন। শেষ ধাপে এসব তথ্য ব্যবহার করে হাতিয়ে নেয় অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ।

এভাবে কার্ড প্রতারণা চক্রের গ্রেপ্তার চারজন হলেন, সোহেল মীর, নাজমুল হোসেন, নাজমুলের মা পারুলী বেগম ও তারা মিয়া। গত শুক্রবার ধারাবাহিকভাবে ফরিদপুর, সাভার ও ঢাকা এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ আড়াই লাখ টাকা ও প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সমকালকে জানান, অনলাইন ব্যবস্থাপনার এই যুগে ভিসা ও মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট ও কেনাকাটা থেকে শুরু করে মোবাইল ফোনে রিচার্জসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। কার্ড ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকাও ভরা যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কার্ড ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্থ হাতিয়ে আসছিল চক্রের সদস্যরা।

ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, কার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টের তথ্য জেনে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গুলশান, বনানী ও হাতিরঝিল থানায় একাধিক মামলা হলে ছায়াতদন্ত করে ডিবি গুলশান বিভাগ। এর একপর্যায়ে চক্রটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এর আগে বিকাশ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বা বিকাশে লেনদেনকারীর তথ্য সংগ্রহ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটলেও মাস্টার ও ভিসা কার্ড ব্যবহারকারীদের সঙ্গে এমন প্রতারণার বিষয়টি নতুন। এ কারণে অনেক ব্যবহারকারী সন্দেহ করেননি।

তদন্ত সূত্র জানায়, চক্রের পলাতক সদস্য শারফিন ঢাকা থেকে বিভিন্ন কার্ড ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নাজমুল ও সোহেলকে পাঠাতেন। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা সেজে গ্রাহককে ফোন করতেন। বিকাশ অ্যাপে ঢুকে কার্ড টু বিকাশে ‘অ্যাড মানি’ অপশনের মাধ্যমেও তারা টাকা আত্মসাৎ করেন। গ্রাহক কখনও সন্দেহ করলে শারফিন বা নাজমুলকে ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেন সোহেল। গ্রেপ্তার তারা মিয়া হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে তুলে সরাসরি প্রতারকদের কাছে পৌঁছে দিতেন। সোহেল ও শারফিন নিজেদের অবস্থান লুকাতে ঢাকা, বরিশালসহ অন্যান্য এলাকার বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে অনেক হাত ঘুরিয়ে টাকা নিতেন। এজন্য তারা বেশি অর্থ দিয়ে অন্যের নামে নিবন্ধন করা সিম কিনে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণার পর সিমটি নষ্ট করে ফেলতেন। নাজমুলের মা এ কাজে সহযোগিতাসহ হাতিয়ে নেওয়া অর্থের সংরক্ষণ ও প্রতারকদের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকার নির্দেশনা দিতেন।