সাশ্রয়ের মাধ্যমে জ্বালানি সংকট মোকাবিলার পরামর্শ জ্বালানি উপদেষ্টার

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, ‘রিজার্ভের অবস্থা ও অনিশ্চিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) কেনা ঝুঁকিপূর্ণ। যদি ২৫ মার্কিন ডলার (প্রতি এমএমবিটিইউ) হিসাব ধরেও এলএনজি আমদানি করি, তাহলে চাহিদা মেটাতে অন্তত ছয় মাস কেনার মতো অবস্থা আছে কি না, জানি না। এখন আমাদের সাশ্রয়ী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রয়োজনের শিল্পমালিকেরা সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস নিতে পারবেন।’

রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আজ রোববার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত শিল্প খাতে জ্বালানি সংকটের প্রভাব প্রশমন শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তৌফিক-ই-ইলাহী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, জ্বালানি সংকটে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কস্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানিকে কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনা না করলে দেশের অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়বে।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বৃহৎ অর্থনীতির স্বার্থে অন্য খাতে রেশনিং করে হলেও শিল্প খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধ আরও এক বছর চলবে, তা ধরে নিয়েই কর্মকৌশল সাজাতে হবে। এ সময় বেশি দাম দিয়ে হলেও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান স্পট মার্কেটের দরে আগামী ছয় মাস যদি ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করি, তাতে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজির চেয়ে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই পরিমাণ ডলার বিনিয়োগের মতো অবস্থানে সরকার নেই।’

 

সংকটের স্বল্প মেয়াদী সমাধান হিসেবে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই ভোলা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজি আকারে জাহাজে করে এনে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হবে। এছাড়া আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কয়লাভিত্তিক কয়েক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। তখন বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে শিল্পে কিছু গ্যাস দেওয়া যেতে পারে।’

তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, ‘আজ যদি আমরা গ্যাস বাঁচাতে চাই তাহলে লোডশেডিং বাড়বে, তখন আপনারাই সমালোচনা করবেন। অথচ একসময় সব জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা চাইলে এসি বন্ধ রাখতে পারি। বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে পারি। সারা দেশে যে পরিমাণ এসি চলে, তাতেই পাঁচ থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াট চাহিদা আছে। আমরা এসি বন্ধ রাখব বা কম চালাব। এতে দুই-তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। গ্যাস সাশ্রয় হবে। সবাই যদি রাজি হই লোড কমাব, তাহলে কিছু গ্যাস শিল্পে দেওয়া যাবে। আমরা কৃষি ও শিল্পে বিদ্যুৎ বেশি দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রয়োজনে অন্যরা বিদ্যুৎ ব্যবহার কম করব। আমরা শপথ নেব, দরকার হলে দিনের বেলায় কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহার করব না।’

 

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, এমসিসিআই সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, সিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিকেএমইএ সহ-সভাপতি আকতার হোসেন অপূর্ব এবং বিসিআই ও এফসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ। সভায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন জ্বালানি সংকটের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে উপস্থাপনা দেন।