জিএম কাদেরের আবেদন খারিজ করেছেন আদালত। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হকের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।
জিএম কাদেরের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য এবং জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া সমকালকে বলেছেন, এ আদেশে তাঁরা সংক্ষুব্ধ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অথবা আগামী রোববার জেলা জজ আদালতে আপিল করবেন।
গত ৩১ অক্টোবর যুগ্ম জেলা জজ আদালত জাপার সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার মামলায়, চেয়ারম্যান হিসেবে দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে জিএম কাদেরকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। ৬ নভেম্বর জিএম কাদের এ আদেশের প্রত্যাহারে আবেদন করেন। ১০ নভেম্বর শুনানির হয়। আজ বুধবার আদেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন আদালত। এই আদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ।
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পক্ষ নেওয়ায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর জিয়াউল হক মৃধাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেন জিএম কাদের। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৪ অক্টোবর মামলা করেন জাপা চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা জিয়াউল হক মৃধা।
মামলায় বলা হয়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের এপ্রিলে জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেন। দুই মাস পর তাঁকে পুনর্বহাল করেন। ওই বছরের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাপা চেয়ারম্যান হওয়ার কথা ছিল সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের। কিন্তু প্রয়াত এরশাদের সই জাল করে চিঠি বানিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন জিএম কাদের। ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে অবৈধভাবে কাউন্সিল ডেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসব কারণ দেখিয়ে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয় মামলায়।
রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, জাপার গঠনতন্ত্রের ২০ ধারা অনুযায়ী দলীয় চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে যে কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন। দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। ২০১৯ সালের কাউন্সিলে এই গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়েছে। এই গঠনতন্ত্রের অধীনেই জিয়াউল হক মৃধা দলীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। বাদ পড়ার পর তিনি কেন গঠনতন্ত্র ও দলীয় চেয়ারম্যানের পদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তা বোধগম্য নয়।
রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, জাপা চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা হয়েছে। একই বিষয়ে নিম্ন আদালতে মামলা চলতে পারে না। মামলাটির আইনগত ভিত্তি নেই। এর পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে কিনা- প্রশ্ন উঠতেই পারে।
আদালতের আদেশ নিয়ে মন্তব্য করেননি জাপা চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু। বিচারক পদ ছেড়ে রাজনীতিতে আসা চুন্নু সমকালকে বলেছেন, কী কারণে আদালত নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন তা বুঝতে পারছেন না। জজ আদালতে আপিল করা হবে। আইনি পথেই বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে।
নিষেধাজ্ঞা পেয়ে গত ১৫ দিন ধরে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা জিএম কাদেরের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। তিনি ১ নভেম্বরের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। দলীয় কার্যক্রম থেকেও দূরে রয়েছেন। বক্তৃতা-বিবৃতিও দিচ্ছেন না। মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আদালত দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, কথা বলতে তো মানা করেননি। জিএম কাদের রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরবেন।
একই আদালতে জাপার আরেক বহিষ্কৃত নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গাও গত ৩ অক্টোবর জিএম কাদেরসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। জাপা নেতারা ধারণা, সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হওয়ায় জিএম কাদের আইনি ও রাজনৈতিক চাপে পড়েছেন।
এরশাদ ও জিএম কাদের বর্জন করলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনে অংশ নেন রওশন। জাপা সূত্রের খবর, এ কারণে আওয়ামী লীগ তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল। তাই জিএম কাদেরের জাপার ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন নিয়েও রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে পারেননি।
জিএম কাদের বিরোধী দলের সুরে কথা বলছেন- এমন কারণ দেখিয়ে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে গত ৩১ আগস্ট থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদ চিঠি দিয়ে জাপার ‘কাউন্সিল’ ডাকেন। পাল্টা হিসেবে পরেরদিন জাপার ২৪ এমপি জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করে স্পিকারকে চিঠি দেন। কিন্তু আড়াই মাসেও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্পিকারের স্বীকৃতি পাননি জিএম কাদের।
সূত্রের খবর, ৩১ অক্টোবর জাপা নেতারা দেখা করতে গেলে স্পিকার জানিয়ে দেন বিরোধীদলীয় নেতার পদে রওশনকেই চায় সরকার। প্রতিবাদে সংসদ বর্জনের ঘোষণা দেয় জাপা। ওই রাতেই রওশন তাঁর আহ্বান করা কাউন্সিল স্থগিত করলে জাপা সংসদে ফেরে। তখন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, রওশনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন জিএম কাদের। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞায় তাঁর সংকট দিনে দিনে বাড়ছে।