৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র হিরো আলমের, বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫৮ হাজার

বগুড়ায় দুটি আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামায় দেখা যায় আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তার সঞ্চয়পত্র আছে ৫৫ লাখ টাকার। তবে বগুড়ার দুটি আসন থেকে উপনির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের দাখিল করা মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা এক শতাংশ ভোটারের তালিকা সঠিক না থাকা, ঋণখেলাপিসহ নানা অসঙ্গতি থাকায় রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম রোববার তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

এদিকে দুটি আসনে যে ২১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যে বার্ষিক আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের প্রার্থী ইমদাদুল হক ইমদাদ।

হফলনামায় দেখা যায়, হিরো আলম ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা, কৃষি জমি থেকে আয় ৬ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫৫ লাখ টাকার। একটি প্রাইভেটকার ও দশ ভরি স্বর্ণালংকার আছে তার। ৫১ শতক কৃষি জমি ও ৯ শতক অকৃষি জমির মালিক তিনি। আর নগদ অর্থ রয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

তবে হিরো আলম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যে হলফনামা দাখিল করেছিলেন তাতে ৫৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রের হিসাব ছিলনা। সে সময়ও একই পরিমান বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন। উপনির্বাচনে বার্ষিক আয় ব্যবসা খাত থেকে দেখানো হলেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আয় দেখান অভিনয় খাত থেকে। ওই সময় ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার টিভি, ফ্রিজ আসবাবপত্রের কথা উল্লেখ করেছিলেন হলফনামায়। এবারের দাখিল করা হলফনামায় তা উল্লেখ করেননি।

বার্ষিক আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সামঞ্জস্য নেই এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, এ টাকা ইউটিউব চ্যানেল থেকে পেয়েছি। টাকার উৎসের কথা হলফনামায় লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, ইউটিউব চ্যানেল থেকেই তার বার্ষিক আয় প্রায় পনের লাখ টাকা।

নির্বাচনী ব্যয় মিটাবেন কীভাবে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, আমার পোষ্টার, মনোনয়নপত্র ফি ছাড়া অন্য কোন খরচ নেই। আমার ভক্তরাই ব্যয় মেটায়। তিনি বলেন, ভোটাররা আমাকে ভালবেসে ভোট দিবে, টাকার বিনিময়ে নয়।

এদিকে দুটি আসনে ২১ জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করা বগুড়া-৬ আসনের জাসদের প্রার্থীর ইমদাদুল হক ইমদাদের বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন এক কোটি ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭৩৬ টাকা। ব্যাংকে রক্ষিত টাকা থেকে মুনাফা পান ১১ হাজার ৭৫৯ টাকা। তার হাতে আছে ২ লাখ টাকা, বাংকে জমা আছে ৬০ লাখ টাকা, ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার আছে। চারতলা বাসার মালিক তিনি। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে ঋণ আছে এক কোটি ৫৪ লাখ ১২ হাজার টাকা।

ইমদাদুল হক ইমদাদ জানান, তার মূল আয় ঠিকাদারী ব্যবসা। এ খাতেই তিনি বছরে কোটি টাকা আয় করেন।

প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক দুই সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে বগুড়া-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর তার হলফনামায় বাংসরিক আয় দেখিয়েছেন ব্যবসা থেকে ৩ লাখ টাকা। নগদ টাকা হিসেবে ব্যাংকে জমার পরিমান এক কোটি ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৮৬১ টাকা। একটি পাজারো জীপ আছে ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের। ৯ লাখ টাকা মূল্যের ২টি টিনসেড বাড়ী,কৃষি ও অকৃষি জমি আছে ৫৩ শতক, ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬১ টাকা।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেন বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫০ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে আয় ২৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫০ টাকা, বাসা ভাড়া থেকে ৫০ হাজার, কৃষি খাত থেকে ৪০ হাজার টাকা। ৭২ লাখ টাকা মূল্যের একটি পাজারো, ১৮ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা আছে। হাতে আছে ৫ লাখ টাকা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আলোচিত বগুড়া-৬ আসনের প্রার্থী সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নানের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ঋণ আছে ৮০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, একটি তিনতলা বাড়ি ছাড়াও তিনটি ফ্লাটের মালিক তিনি। তার মাথার উপর ঝুলছে দশটি মামলা। ৪৬০ শতক কৃষি জমির মালিক তিনি।

বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপুর বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ টাকা, হাতে আছে ৫০ হাজার টাকা, ৫ একর কৃষি জমির মালিক তিনি। তার ৯ একরের চা বাগান রয়েছে, ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে তার। এছাড়া তার ৯ তলা নির্মাণাধীন বাসা।