কেশবপুরে শিক্ষক নিয়োগ: অধ্যাক্ষসহ চারজনকে ১৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড

যশোর কেশবপুরে বগাশাহ কারারীয়া আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে দূনীতির দায়ে মাদ্রাসার অধ্যাক্ষসহ চারজনকে বিভিন্ন ধারায় ১৭ বছর করে সশ্রম কারাদন্ডও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক এক রায়ে এ আদেশ দিয়েছেন।

আসামিরা হলো, বগা শাহ কারারীয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলী আহসান, সভাপতি এসএম বাবর, দারুল উলুম মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন ও যশোর সরকারি সিটি কলেজের তৎকালিন প্রধাণ সহকারী জিমানুর রহমান। সাজাপ্রাপ্ত সকলেই কারাগারে আটক আছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, বগা শাহ কারারীয়া আলিম মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক কৃষি ও কম্পিউটার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি করা করা হয়। এ দুই পদে শামসুননাহার শিউলী ও মাহমুদা খাতুন ছাড়া আর কেউ অন্য কেউ আবেদন করেনি। এরমধ্যে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগ বন্দ করে দেয়। মাদ্রাসার অধ্যাক্ষ ও সভাপতি পিছনের তারিখ দেখিয়ে ওই দুইজনকে নিয়োগ দেয়ার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আবেদনকারী দুইজনের কাছ থেকে তারা ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এরপর ওই বছরের ৪ জুন তারিখ দিয়ে ওই দুইজনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য পরীক্ষার চুড়ান্ত ফলাফল বিবরনীও রেজুলেশন করে নিজেরা সাক্ষর করেন। নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে অধ্যাক্ষ আব্দুল মতিনের কাছ থেকে তারা সাক্ষর গ্রহণ করেন। ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে সরকারি সিটি কলেজের অধ্যাক্ষের নাম থাকায় মাদ্রাসার অধ্যাক্ষ ও সভাপতি প্রধান সহকারী মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেন। মিজানুর রহমান ২লাখ ১হাজার ৫শ’ টাকা ঘুষ নিয়ে ২২৩ নম্বর স্বারকে ২৭ মে তারিখ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয় বিশেষজ্ঞ, ডিজির প্রতিনিধির মনোনয়ন পত্র তৈরী করেন। মিজানুর রহমান এরপর নিয়োগ পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম জাল সাক্ষর করে ৪ জুন চুড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেন। ৮ জুন মাহমুদা খাতুন ও শামসুন্নাহারকে নিয়োগ পত্র প্রদান করেন। ১০ জুন তারা মাদ্রাসায় যোগদান করেন। বিষয়টি দুদকের নজরে আসায় প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী ৬ জনকে আসামি করে কেশবপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় মাদ্রসার সভাপতি, দুই অধ্যক্ষ ও সিটি কলেজের তৎকালিন প্রধান সহারীকে অভিযুক্ত করে ২০২৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট জমা দেন দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ না পাওয়ায় শামছুন্নাহার ও মাহমুদা খাতুনের অব্যহতির আবেদন করা হয়।

এ মামলার দীর্ঘ সাক্ষী গ্রহণ শেষে আসামি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ৪২০ ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ-, ৪৬৮ ধারায় ৭ বছর সশ্রম কারাদ-, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ-, ৪৭১ ধারায় ২ বছর সশ্রম কারাদ-, ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদ-, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ৩ বছর সশ্রম কারাদ-, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদ-ের আদেশ দিয়েছে আদালত।

আসামি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসএম বাবর ও অধ্যক্ষ আলী আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাদের ৪২০ ধারায় ৫ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদ-, ৪৬৮ ধারায় ৭ বছর করে সশ্রম কারাদ-, ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদ-, ৪৭১ ধারায় ২ বছর করে সশ্রম কারাদ-, ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ২ মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

আসামি দারুল উলুম মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল মতিনকে ৪২০ ধারায় ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদন্ড-৪৬৮ ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড, ৪৭১ ধারায় ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। রায়ে সাজা একই সাথে চলবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।