জাতিসংঘের অনুরোধ উপেক্ষা করে ইয়েমেনে আবারও হুথি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনারা। শনিবার ভোরে (স্থানীয় সময়) দেশটির রাজধানী সানায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা
শুক্রবার ভোরে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মার্কিন ও ব্রিটেনে একাধিক বিমান হামলার পর সংঘর্ষ না বাড়ানোর জন্য দুপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসে। কিন্তু সেই আহ্বানের তোয়াক্কা না করে ইয়েমেনে আবারও হামালা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরাইল-হামাস সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার সঙ্কার মধ্যেই ইয়েমেনে ক্রমাগত হামলা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে একটি বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। এপি, এএফপি।
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, শনিবার হুথিদের একটি রাডার সুবিধাকে লক্ষ্য করে তোমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। হামলাটি চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কার্নি। এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় চালানো হামলার পরিধি কম ছিল। যুক্তরাষ্ট্র দুই দফা হামলায় ২৮টি বিভিন্ন হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।
হুথিদের মতে, হামলাটি ৬০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। প্রাথমিক হামলায় পাঁচজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে। মার্কিন সামরিক ও হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, হুথিরা পালটা হামলা চালানোর চেষ্টা করবে।
হুথি-চালিত আল-মাসিরাহ টিভি স্টেশন দাবি করেছে, ইয়েমেনের রাজধানী সানা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যও জড়িত। কিন্তু যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র শনিবার জানিয়েছে, হুথিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা হামলায় যুক্তরাজ্যের হাত নেই। বলেছে, এই হামলায় যুক্তরাজ্য জড়িত নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপ। পরপর দুদিন হামলা চালিয়ে ইয়েমেনে আরও হামলা চালানোর আশা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, পরপর দুবার আঘাত হানলেও আরও হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার বলেছেন, হুথিরা লোহিত সাগরে ইসরাইলগামী জাহাজে আক্রমণ করা বন্ধ না করলে এ হামলা চলতে থাকবে। এদিকে হুথিরাও পালটা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনকে এ হামলার চরম মূল্য দিতে হবে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এই হামলার সমালোচনা করে বলেছেন, নির্বিচারে হামলা শুধু এই অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া ইয়েমেনে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ তাদের মিত্রদের অভিযুক্ত করেছেন। সতর্ক করে বলেছেন, ক্রমাগত উত্তেজনা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে একটি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ইতোমধ্যেই এ সংঘর্ষ লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত, সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে জাহাজের আরও ১০ দিন বেশি সময় লাগছে। ফলে জিনিসপত্রের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।