‘রাজধানীর উত্তরা থেকে শেরপুর যাওয়ার পথে অপহরণ হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসিবুর রহমান হিমেল। দীর্ঘ একমাস তাকে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে আসছিল একটি চক্র।
সর্বশেষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের দুর্গম পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয় হিমেলকে। পরে অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হিমেল অপহরণের ঘটনায় তদন্তে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে এই অপহরণের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক সামিদুল। এমনকি বিভিন্ন অপহরণ চক্রের সঙ্গে গাড়িচালকদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ’।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টরোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিমেল অপহরণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) লালবাগ বিভাগ তদন্ত করছিল।
এই মামলার তদন্তে হিমেলের গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই চালকই অপহরণের মূলহোতা। সামিদুল যখন গাড়ি চালাতেন তখন তার ভেতরে লোভ জাগে, তার স্যারের মতো নিজের একটি গাড়ি থাকবে। সামিদুল প্রথমে তুরাগ এলাকার হানিফ বাবুর্চি নামের এক সাইটের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর পরবর্তী আলোচনা হয় ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মামুনের সঙ্গে। তিনি একাধিকবারের চেয়ারম্যান। হিমেলকে অপহরণ করে তার বাসায় রাখার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে হিমেলকে যখন অপহরণ করে তার বাসায় নেওয়া হয়, তখন মুক্তিপণের টাকা পেতে দেরি হওয়ায় মামুন গাড়ি দিয়ে সীমান্ত এলাকায় হিমেলকে পাঠায়। গাড়িতে করে হিমেলকে সীমান্তের একটি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সামিদুল ও মালেক, মোবারক, মানিককে নিয়ে চলে যায়। তখন থেকেই হিমেলের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। পরবর্তীতে ডিবি লালবাগ বিভাগ কাজ শুরু করে।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ডিবি শরীয়তপুরের চর অঞ্চল থেকে মাসুদকে গ্রেপ্তার করে। মাসুদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউরা, নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরে সোর্স নিয়োগ করা হয়। এই সোর্সের মাধ্যমে ডিবি জানতে পারে, এই গ্রুপটা শুধু অপহরণ করেই না তারা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তারা গরু ও চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। চক্রটি অপহরণের পর ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করে, পরে সেই নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও হিমেলের মায়ের কাছে পাঠায়।