কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

কুড়িগ্রামের উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে চলছে এখন শুধু ভাঙনের হাহাকার।
ব্রহ্মপুত্র যেন সেখানে সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে।
ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙনে গেল ২ সপ্তাহেই বিলীন হয়েছে কয়েকশত একর আবাদি জমি। অন্তত ৯টি পরিবারের বসতভিটা নদের গর্ভে চলে গেছে। হুমকিতে আছে আরও অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ টি পরিবার। এছাড়া ভাঙন হুমকিতে আছে ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মার্কাজ মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠসহ গ্রামের বেগম নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের আকস্মিক ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙন প্রতিরোধে এক হাজার জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও তা কোনও কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।  ভাঙন তীব্রতা একে একে গ্রাস করছে বসত ভিটা, আবাদি জমি, স্থাপনা ও গ্রামীণ সড়ক। সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন একের পর এক পরিবার।
ভাঙনে ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এই বছর আমার ১.৫ একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বসত বাড়িটিও ভাঙনের পথে। তাই এই বাড়িটি সরিয়ে নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, শুধু আমিই নই, আমাদের মতো এখনও অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন আমাদের কোনো জমি নেই, অন্যর জমিতে আপাতত ঘর করছি। আগামীতে কি হবে আল্লাহ ভালো জানে।
এই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী মতিন বলেন, এই শুকনো মৌসুমেই ভয়াল এই নদী আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। বাড়ি-ঘর, জমিজমা হারিয়ে আমরা এখন পথের ফকির। সরকার তো আমাদের দুঃখ দেখে না। আমাদের চোখের পানি দেখার মতো কেউ নেই।
গত দুই বছরে ব্রহ্মপুত্র আর ধরলার ভাঙনে ইউনিয়নের প্রায় হাজার বিঘা আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। শতাধিক বাসিন্দা বসতভিটা হারিয়েছেন। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে চলে গেছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোর পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ফেলা ছাড়া স্থায়ী কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মমিন বলেন, আমার নিজের বাড়িও ভাঙনের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। যেভাবে ভাঙছে তাতে শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হয় না। মোল্লারহাট থেকে খুদিরকুটি আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়গামী প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো গ্রামীণ সড়কটির ৬০ থেকে ৭০ ফুট অংশ নদীতে চলে গেছে। এখনই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নিলে সড়কটি থাকবে বলে মনে হয় না।
মমিন আরও বলেন, শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র যেন রাক্ষস হয়ে গেছে। হঠাৎ পানি আর স্রোত বাড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে কোনও ভাবেই ভাঙন থামছে না। আমাদের গ্রামটি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দরকার। বালুর বস্তা ফেলে শেষ রক্ষা হবে না।
ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী এবং অস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাউবো। ধরলার উজান থেকে বেগমগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার ভাঙন কবলিত তীরের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিরক্ষামূলক কাজের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। আর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র তীর প্রতিরক্ষায় ‘সুখবর’ থাকলেও এখনও টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে চলমান ভাঙন থেকে আপতত নিস্তার মিলছে কিনা তা নদের গতিবিধির ওপরই নির্ভর করছে।
পাউবো, কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘ধরলা তীরের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্লক, স্যান্ড সিমেন্ট এবং স্যান্ড ব্যাগ দিয়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। এতে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ধরলা তীরবর্তী অংশের স্থায়ী প্রতিরক্ষা হবে। তবে ইউনিয়নের অপর প্রান্তে ব্রহ্মপুত্র তীর প্রতিরক্ষায় সামান্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা দিয়ে স্যান্ড সিমেন্ট ব্যাগ ব্যবহার করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজের জন্য আমরা ডিজাইন প্রস্তুত করছি।