যশোর বড় বাজারে মেলেনি ইজারাদার, চলছে খাস আদায় ক্ষতি অন্তত ৫০ লাখ টাকা

প্রভাবশালি মহলের অদৃশ্য চাপে যশোরের বড় বাজারের বার্ষিক ইজারায় কেউ অংশ নেয়নি। ফলে পৌরসভার পক্ষ থেকে খাস আদায় পদ্ধতিতে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এতে পৌর কর্তৃপক্ষ বুক ভ্যলু ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আদায় হবে বলে আশাবাদি। এদিকে বাজার ব্যবসায়িদের মতে পৌরসভা ও সরকার অন্তত ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়বে। তাছাড়া একটি বিশেষ মহল অলিখিত ভাবে লাভবান হবে। গুঞ্জন রয়েছে একটি বিশেষ মহলের চাপে এ বছর বড় বাজারের ইজারায় কেউ অংশ নেয়নি। আর পৌরসভারও কেউ কেউ ওই বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতে এই আয়োজন করেছে। এর মধ্যে পৌর সভার একজন প্রকৌশলীর জোর ভূমিকা রয়েছে।
পৌরসভার পক্ষ থেকে ইজারায় অংশ না নেয়া অজানা কারণটি স্পষ্ট না করলেও হাট-বাজারের ইজারার সাথে জড়িত অনেকেই জানিয়েছেন, একটি প্রভাবশালী মহলের অলিখিত চাপের কারণে এবার বড় বাজার ইজারায় কেউ অংশ নেয়নি। গতবছর (১৮৩১) যে ইজারাদার হাট নিয়েছিলেন ৫ আগস্টের পর তিনি টাকা তুলে নিতে পারেননি। তার টাকা কোনো এক প্রভাবশালী মহলের কারণে আটকে যায়। বড় বাজার পূর্ব ও পশ্চিম দুই হাটে গত বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার ইজারা হয়। অথচ এবার কেউ ইজারায় অংশ নেয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এবার কি কারনে ইজারায় কেউ অংশ নেয়নি! অনেকের মতে, বুক ভ্যলু মানে হলো গত ৩ সনের ইজারায় প্রাপ্ত অর্থের গত বছরের মূল্য। গত বছরের চেয়ে তার আগের ২ বছর ইজারা মূল্য কিছুটা কম ছিল বলেই বুক ভ্যলু এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা হয়েছে। এর উপর থাকবে ২০ শতাংশ ভ্যাট ট্যাক্স যা ইজারা গ্রহণকারিকেই পরিশোধ করতে হয়। পৌরসভা খাস আদায়ে গেলে পৌরসভাকেই ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করা লাগবে। ফলে মূল টাকা থেকে শোধ করতে হবে বিপুল অর্থ।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, যশোর বড় বাজার পূর্ব ও পশ্চিম এই দুই অংশে বিভক্ত। সাধারণত বাংলা বছর হিসেবে ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত মেয়াদে দরপত্র আহ্বান করে পৌর কর্তৃপক্ষ। গত বছর অর্থাৎ ১৪৩১ সনে পূর্ব বড়বাজার হাজী আব্দুল করিম সড়কের আল আমিন নামে একজন ইজারাদার ৯৬ লাখ ১ হাজার টাকায় ক্রয় করেছিলেন। এ বছর অর্থ্যাৎ ১৪৩২ সনের জন্যে ৩ বার স্থানীয় ৩টি দৈনিক কাগজে বিজ্ঞাপন দিলেও কোনো ইজারাদার বা দরদাতা দরপত্রে অংশ নেয়নি। দরপত্রে অংশ নেয়ার সর্বশেষ সময় ছিল মার্চ মাসে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো দরদাতা অংশগ্রহণ না করায় পৌরসভা খাস আদায়ের মাধ্যমে দৈনিক আদায় চালু রেখেছে।
পৌরসভার সূত্র মতে, এতে প্রথম সপ্তাহে ৩ লাখ , দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩ লাখ এক হাজারের অধিক টাকা আদায় হয়েছে। হাট-বাজার ইজারা ও আদায়ে পূর্ব যাদের অভিজ্ঞতা আছে এমন লোকদের দিয়ে আদায় করানো হচ্ছে। তাদেরকে দৈনিক ৪ শত টাকা হাজিরা দিতে হয়। বাজারের আদায় পরিচালনার জন্যে  পৌর সভার একটি কমিটি রয়েছে যার প্রধান পৌর প্রশাসক। এছাড়া রয়েছেন জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধি, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী, কোঅপ্ট সদস্য রয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিও এবং পৌর হিসাবরক্ষক। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হলেও সঠিক তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞাপন প্রচারিত হলে পূর্বে বাজারে ইজারা গ্রহীতা একটি প্রভাবশালী মহলের চাপে বাধ্য হয়ে অন্যরা দরপত্র জমা দেয়নি। এর ব্যাখ্যা হিসেবে অভিযোগকারীদের দাবি, খাস আদায় পৌরসভা লোক মারফত করবে, সে লোকগুলি বিশেষ মহলের। তাছাড়া কিছুদিন পর পৌরসভা খাস আদায় সপ্তাহ ভিত্তিক স্পট নিলামের ডাক দিবে। সেই স্পট নিলাম বিশেষ পক্ষ নামে বা বেনামে কিনবে। এতে পৌরসভা অর্থিক ভাবে ক্ষতির মুুখে পড়বে।
পৌর প্রশাসক ও ডিডিএলজি রফিকুল হাসানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি খাস আদায়ের মাধ্যমে খাজনা আদায় হচ্ছে জানিয়ে পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
পরবর্তীতে পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি খাস আদায়ের কথা জানান। তিনি বলেন ইতোমধ্যে দুটি হাটে আদায় হয়েছে ৬ লাখ টাকার বেশি।  পৌরসভার একটি কমিটি এই  আদায় পরিচালনা করছে। নতুন লোক হলে আদায় হবে না তাই পুরোনো অভিজ্ঞ লোক দিয়ে  আদায় করানো হচ্ছে। তাদের বুক ভ্যলু এক কোটি ৬৭ লাখ টাকার বেশিই আদায় হবে।
 কেনো কেউ দরপত্রে অংশ নেননি বা কোন ৩টি কাগজে বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয়েছিল তা যেমন জানাতে চাননি তেমনি গত বছরে ইজারা গ্রহণকারীর  বিস্তারিত তথ্যও জানাতে পারেননি। একই ভাবে হাটে কতজন আদায় করছে বা তারা কারা এ তথ্যও জানাতে চাননি। তিনি পূর্ববাজারের কিছু তথ্য দিলেও পশ্চিম বাজারের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেননি। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, পৌরসভা হয়  এভাবে আদায় করবে নতুবা স্পট নিলামের মাধ্যমেও আদায় করতে পারে। এর মধ্যে অন্যকোনো কারসাজি আছে কিনা তিনি তা জানেন না।