গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা জনজীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এই অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় পানির উচ্চতা ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী সদর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট এবং সুবর্ণচর উপজেলায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে অনেক বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এই চারটি উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, রামপুর এবং চর এলাহী ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী ও বামনী নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মুছাপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়ক তলিয়ে গেছে, এবং বহু বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, যার ফলে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
অপরদিকে, জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন সড়ক পানিতে ডুবে গেছে এবং পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। নোয়াখালী পৌর শহরের স্টেডিয়াম পাড়া, ডিসি সড়ক, জেলখানা সড়ক এলাকা, হরিনারায়ণপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হাউজিংসহ বেশিরভাগ এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুর কাছাকাছি পানি জমেছে। এছাড়া, এসব এলাকার নিচতলা ও কাঁচা ঘরগুলোতে পানি ঢুকে যাওয়ায় মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। চলমান বর্ষায় শহরের বেশিরভাগ সড়কে খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় সেগুলো “মরণ ফাঁদে” পরিণত হয়েছে।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন এবং চলমান দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিই পানি বৃদ্ধির মূল কারণ। তিনি বলেন, বৃষ্টি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং বুধবার রাতের বৃষ্টির ওপর পরিস্থিতির পরবর্তী গতিপথ নির্ভর করবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতা ও বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা মাঠে কাজ করছেন।