স্টাফ রিপোর্টার, যশোর: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অধিকতর প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যশোরে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা- অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাগত বক্তব্য দেন ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে জাতীয় ভোক্তা- অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের উদ্যোগে সহকারি পরিচালক সোহেল শেখ বলেন, বাজার তদারকিতে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করে তা বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স নেই, কর্মচারীদের পোশাক নেই এবং খাদ্যে ঢাকনা ব্যবহার করা হচ্ছে না, অবৈধ প্রক্রিয়ায় উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণ কেক ও বিস্কুট, কোমল পানীয় সংরক্ষণ করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। আবার ক্রেতার কাছ থেকে পণ্যের ধার্য্যকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য নেয়া হচ্ছে। এসব অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় জুলাই- ২০১৭ থেকে মে- ২০১৮ পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা- অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের বাজার তদারকিতে জেলার উপজেলার ৯৫টি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৫শটাকা জরিমানা আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১শ’ ২১টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬শ’ টাকা জরিমানা আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে গত তিন বছরে এ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে ৪১টি। এরমধ্যে ৩৬টি অভিযোগ নিঃষ্পত্তি করা হয়েছে।
ভোক্তা- অধিকার বিরোধী কাজ ও অপরাধ বিষয়ে তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ ৩৭ থেকে ৫৬ ধারায় যথাক্রমে পণ্যের মোড়ক ইত্যাদি ব্যবহার না করা, মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করা, সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, ধার্য্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রয়, ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রয়, খাদ্য পণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা, প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা, ওজনে কারচুপি, বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি, পরিমাপে কারচুপি, দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতাতে কারচুপি, পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয়, সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য, অবহেলা ইত্যাদী দ্বারা সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য, জীবনহানি, ইত্যাদী ঘটানো, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের, অপরাধ পুনঃসংগঠন এমন সকল কাজই ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যক্রম। এসব অপরাধে অনূর্ধ্ব ৩ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে। তাছাড়া আদালত যথাযথ মনে করলে দন্ডের অতিরিক্ত হিসেবে অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট অবৈধ পণ্য বা পণ্য প্রস্তুতের উপাদান সামগ্রী রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দিতে পারবেন।
প্রধান অতিথি মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, ভোক্তা- অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা- অধিকার বিরোধী কাজ প্রতিরোধের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল এ আইন প্রণয়ন করে। ভোক্তা ও বিক্রেতাদের এ আইন জানতে হবে। তিনি বলেন, পণ্য বা সেবা ক্রয়ে প্রতারণা রোধসহ কিছু কাজের ক্ষেত্রে আমাদের এক হতে হবে। তিনি সকলকে ভেজালের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, জেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম, জেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শিশির কান্তি পাল, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জুলফিকার আলী, যশোর হোমিওপ্যাথী করেজের শিক্ষক ডা. এসএম আব্দুল্লাহ, জেলা ক্যাব সদস্য সুকেশ জোয়াদ্দার, জেলা ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম লিটন চাকলাদার কর্প’র পরিচালক ইমানুর রহমান ইমন প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন জেলা ক্যাব সদস্য শাহাজাহান নান্নু।