বাংলাদেশের সিনেমায় বিশেষ অবদান রাখা এই মানুষটির পুরো নাম আব্দুর রহমান। ১৯৩৭ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রসেয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেই সময় কোন মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিরের কেউ অভিনয় করবে ভাবাই যেতো না।
১৯৫৭ সালে ২১ বছর বয়সে সিনেমার টানে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় আসেন রহমান। ঢাকায় এসে খুঁজে বের করেন আরেক কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্যাপ্টেন এহতেশামকে (আবু নুর মোহাম্মাদ এহতেশামুল হক)। তার পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। ছবিটি ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায়। তারপর একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গেছেন।
১৯৬৭ সালে ‘দর্শন’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের নায়ক ছিলেন তিনি। এগুলোর মধ্যে ১৯৮১ সালে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘অংশীদার’ চলচ্চিত্রটি কালজয়ী হয়ে আছে।
তার পরিচালিত উর্দু চলচ্চিত্র হলো ‘দর্শন’, ‘কঙ্গন’, ‘যাহা বাজে সেহনাই’ ইত্যাদি। আর বাংলা চলচ্চিত্র ‘নিকাহ’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পাকিস্তানে উর্দু চলচ্চিত্র ‘চাহাত’, ‘দোরাহা’ ও ‘লগান’-এ অভিনয় করেন।
পরে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ ‘দেবদাস’ নির্মাণ করেন।
সেখানে নায়ক রহমান চুনি লালের চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮১ সালে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘অংশীদার’ চলচ্চিত্রেও তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেন। রহমান অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ছিল অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘আমার সংসার’।
মাসুদ চৌধুরীর পরিচালিত ‘প্রীত না জানে রীত’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে সিলেটে গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি একটি পা হারান। এ দুর্ঘটনায় পা হারানোর পর রহমানের ক্যারিয়ার থমকে যায়। বাংলা, উর্দু ও পশতু ভাষার চলচ্চিত্রে সমানভাবে জনপ্রিয় অভিনেতা রহমান অভিনীত উল্লেখ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো উর্দুতে ‘চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘মিলন’, ‘বাহানা’, ‘ইন্ধন’, ‘দর্শন’, ‘জাহাঁ বাজে সেহনাই’, ‘গোরি’, ‘প্যায়াসা’, ‘কঙ্গন, ‘দোস্তি’, ‘নাদান’; বাংলায় ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘এই তো জীবন’, ‘হারানো দিন’, ‘যে নদী মরু পথে’, ‘দেবদাস’।
পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশের জাতীয় ও বাচসাসসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০০৫ সালের ১৮ জুলাই ঢাকায় এই কিংবদন্তি অভিনেতার জীবনাবসান ঘটে।