সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখায় যশোরে পাঁচ গুণীজনকে সম্মাননা দিয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের মুন্শি মেহেরুল্লাহ ময়দানে এই গুনীদের উত্তরীয় ও মেডেল পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।
সম্মাননা পেয়ে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ অশোকা দত্ত, যাত্রাশিল্পী হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, কবি ও সাংবাদিক ফখরে আলম, নাট্যশিল্পী দিলীপ কুমার সাহা ও আলোকচিত্রী বিমল সরকার তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহামুদ হাসান বুলু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক সুকুমার দাস, সুরধুনীর সভাপতি হারুন অর রশিদ, বিবর্তন যশোরের সভাপতি সানোয়ার আলম খান দুলু, উদীচী যশোরের সহ-সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মজনু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদ গণি খান রিমন, শেকড়ের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু, চঞ্চল সরকার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী কামরুল হাসান রিপন। সম্মাননা প্রদান শেষে রওশন আলী মঞ্চে পরিবেশিত হয় যাত্রাপালা ‘গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম’।
অশোকা দত্ত : রবীন্দ্র সংগীতে নিবেদিত শিল্পী অশোকা দত্ত ১৯৫৩ সালের ১ জানুয়ারি খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। মা শোভা দত্তের কাছ থেকেই সংগীত শেখেন অশোকা। পরে কলেজে পড়ার সময় সংগীতের উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন। কর্মজীবনে তিনি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে উপাধ্যক্ষ হিসেবে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী।
হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস : ১৯৪৪ সালে যশোরের মণিরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন হরেন্দ্রনাথ। বাবা পঞ্চনন বিশ্বাস ছিলেন অঞ্চলের সেরা যাত্রাশিল্পী। বাবার মতন তিনিও ১৯৬৪ সালে পেশাদার শিল্পী হিসেবে জয়লক্ষ্মী অপেরায় যোগ দেন। এরপর বিভিন্ন খ্যাতনামা যাত্রাদলে অভিনয় করে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন।
ফখরে আলম : ১৯৬১ সালে যশোরে জন্মগ্রহণ করা ফখরে আলম ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র জীবনেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হন। কাজ করেছেন সাপ্তাহিক রোববার, দৈনিক আজকের কাগজসহ বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকায়। বর্তমানে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও কৃষি বিষয়ে অনেক প্রতিবেদন লিখেছেন তিনি। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার লেখা বেশ কয়েকটি গল্প ও কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিকতায় পেয়েছেন মোনাজাত উদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, এফবিএবি, টিআইবি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার।
দিলীপ কুমার সাহা : মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর হাতে শহীদ নারায়ন চন্দ্র সাহার ছেলে দিলীপ যশোরের নাট্যাঙ্গণে খুবই পরিচিত মুখ। নাট্যাভিনয়ের পাশাপাশি নাট্য নির্দেশনাও দিয়েছেন। ১৯৬৬ সালে ডায়মন্ড ক্লাবে থিয়েটার নাটকে প্রথম অভিনয় করেন দুষ্টু বালকের চরিত্রে। এরপর বহু নাটকে অভিনয় করেছেন, দিয়েছেন নির্দেশনাও।
বিমল সরকার : ১৯৬৩ সালে বরিশালে জন্ম নেন বিমল। বাল্যকালে বাবাকে হারান তিনি। তাই অল্প বয়সেই তাকে নামতে হয় জীবনযুদ্ধে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্টুডিওতে ফটোগ্রাফির কাজ শেখেন। এক পর্যায়ে প্রয়াত ক্রীড়া সাংবাদিক জীবন বোসের হাত ধরে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা ত্রিশ বছর কাজ করেছেন বিভিন্ন সংবাদপত্রে।